নলছিটি পৌরসভার পাঁচ কর্মচারীকে বদলির আবেদন মেয়রের

ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার পাঁচ কর্মচারীকে অন্যত্র বদলির জন্য স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছেন পৌর মেয়র আবদুল ওয়াহেদ খান। মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে তিনি গত ২৪ অক্টোবর এ আবেদনপত্র পাঠান।
কর্মচারীরা স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়া যায়। তাই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মেয়র।
কর্মচারীরা হলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান সহকারী ও কর আদায়কারী গোলাম মোস্তফা, বিল ক্লার্ক (পানি শাখা) মিরাজ হাসান প্রিন্স, নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. কাউয়ুম হোসেন, ইলেট্রিশিয়ান সিরাজুল ইসলাম লিজন ও ক্যাশিয়ার রেখা বেগম। এদের মধ্যে ইলেকট্রিশিয়ান লিজন ও ক্যাশিয়ার রেখা দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হন।
এদিকে পাঁচ কর্মচারীর মধ্যে অন্য তিনজনকে কাউন্সিলররা পৌরসভায় আসতে নিষেধ করেছেন, তাই বাধ্য হয়ে তারা গত ২০ অক্টোবর থেকে এক মাস সাত দিনের ছুটি নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সেই থেকে আজ ১২ দিন অফিস করছেন না এ তিন কর্মচারী। এতে পৌরসভার কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে। সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নাগরিকরা।
জানা গেছে, নলছিটি পৌরসভায় দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করে আসছেন গোলাম মোস্তফা, মিরাজ হাসান প্রিন্স, মো. কাউয়ুম হোসেন, সিরাজুল ইসলাম লিজন ও রেখা বেগম। এর মধ্যে ক্যাশিয়ার রেখা ও ইলেকট্রিশিয়ান লিজনের বিরুদ্ধে মেয়রের স্বাক্ষর জাল করে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ ওঠায় গত ২৬ জুলাই পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে পৌর মেয়র বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। পরে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করেন তিনি। বর্তমানে তারা জামিনে মুক্ত আছেন। এর পর থেকেই শুরু হয় পৌরসভার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। মোস্তফা, প্রিন্স ও কাউয়ুমকে পৌরসভায় আসতে নিষেধ করেন কাউন্সিলররা। ২০ অক্টোবর তাদের এক সপ্তাহের জন্য ছুটি নিতে বাধ্য করা হয়। পৌর মেয়র তাদের ছুটি প্রদান করেন। এই এক সপ্তাহ পার হতেই আবারও তাদের এক মাসের ছুটি নিতে বলা হয়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে চিকিৎসক তাদের বিশ্রামে থাকতে বলেছেন দেখিয়ে তারা তিনজই গত ২৭ অক্টোবর আবারও এক মাসের ছুটি নেন। তারা ছুটিতে থাকায় তাদের বাড়িতে গিয়ে কাউন্সিলররা দাপ্তরিক চাবি নিয়ে আসেন। এরপর থেকেই পৌরসভার দাপ্তরিক কাজ থমকে যায়। কর নির্ধারণ, কর আদায়, নকশা ও প্লান কার্যক্রম, ওয়ারিশ, জন্ম ও মৃত্যু সনদ, পানি শাখার বিল প্রদান ও কম্পিউটারের যাবতীয় কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে পৌরসভার বাসিন্দারা। নাগরিক সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে তারা।
পৌরসভার এ কর্মচারীরা জানান, পৌর মেয়র তাদের তিন কর্মচারীকে ছুটি প্রদান করেছেন। ছুটির মেয়াদ শেষ না হতেই তিনি গত ২৪ অক্টোর সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুজনসহ পাঁচজনকে অন্যত্র বদলির সুপারিশ করেছেন মন্ত্রণালয়ে। পাশাপাশি পৌরসভার ২৫৮/২১ নম্বর স্মারকে তাদের পদশূন্য ঘোষণা করে, নতুন নিয়োগের জন্যও আবেদন করেন। এ খবর শুনে হতাশ হয়ে পড়েন পৌরসভার পাঁচ কর্মচারী। বর্তমানে তারা দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান সহকারী ও কর আদায়কারী গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমি ২৪ বছর ধরে পৌরসভায় চাকরি করি। আমাদের নামে কোনো অভিযোগ নেই। কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ নেই। তার পরও আমাদের তিনজনকে এক মাস সাত দিনের ছুটি দিয়েছেন মেয়র। আবার তিনিই আমাদের পদশূন্য করেছেন। কয়েকজন কাউন্সিলরের পরামর্শে আমাদের ওপর অন্যায় করা হচ্ছে।’
বিল ক্লার্ক (পানি শাখা) মিরাজ হাসান প্রিন্স বলেন, ‘আমাদের ছুটি দিয়েছেন, আবার বাড়িতে গিয়ে চাবিও নিয়ে এসেছেন কাউন্সিলররা। আমাদের ওপর নানা ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্তা চলছে। এ অবস্থায় আমাদের অন্যত্র বদলি করা হলেও আপত্তি নেই।’
পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মামুন মাহমুদ বলেন, ‘যেসব কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তারা নিজেরাই চাবি বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেছেন। আমরা শূন্যপদে নতুন করে নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।’
এ ব্যাপারে নলছিটি পৌরসভার মেয়র আবদুল ওয়াহেদ খান বলেন, ‘আমরা শূন্যপদে নতুন নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। এখন পাঁচ কর্মচারী না থাকায় পৌরসভার কার্যক্রমে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। শূন্যপদে নিয়োগ হলে সমস্যা থাকবে না।’