পাঁচ আলেমের না, দাফন করলেন ইউএনও

মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার ভবরপাড়া গ্রামে আজ বুধবার এক ব্যক্তি মারা যান। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কি না, সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ফলাফল এখনো পাওয়া যায়নি।
এই ধরনের মৃতের দাফনের জন্য সরকারি বিশেষ নির্দেশনা ও ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে পরিবার থেকে বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়।
প্রশাসন থেকে মৃতের জানাজা ও দাফনের জন্য ডাকা হয় মেহেরপুর জেলা ইসলামী ফাউন্ডেশনের গঠিত কমিটির পাঁচজনসহ আরো একজন আলেমকে। কমিটিটি সারা দেশে গঠন করাই হয়েছে এই ধরনের মৃতো জানাজা ও দাফনের জন্য। কিন্তু পাঁচ আলেম যখন জানলেন, ওই ব্যক্তির করোনা সন্দেহে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে তখন তারা সরাসরি ওই লাশটির জানাজা ও দাফনে অস্বীকৃতি জানিয়ে চলে যান।
তাদেরকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেন মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উসমান গনি। তিনি তাদের বলেন, যে ব্যক্তি মারা গেছেন তিনি হয়তো করোনা আক্রান্ত না। শুধু সন্দেহের কারণে স্যাম্পল পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া এই কমিটি তো শুধু করোনার কারণে মৃত্যু বা করোনা সন্দেহ মৃত্যু ব্যক্তিদের দাফনের জন্য গঠিত হয়েছে। তাহলে আপনারা এই কাজটি না করলে আর কে এগিয়ে আসবে?
কিন্তু কোনো যুক্তিতেই কাজ হয়নি। জানাজা, দাফন না করেই চলে যান পাঁচ আলেম। ফলে মৃতের লাশ নিয়ে বিপদে পড়ে যান ইউএনও উসমান গনি। তখন তিনি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেন।
তারপর ইউএনও নিজে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) একসঙ্গে লাশ দাফনের জন্য যাত্রা করেন। আলেমদের জন্য আনা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) মৃত ব্যক্তির আত্মীয়দের মধ্য থেকে চার যুবককে পরানো হয়।
ইউএনও উসমান গনি বলেন, ‘জানাজা পড়ানোর জন্য আমরা নিজেরাই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে গোপালনগর জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা তৌহিদুল ইসলাম এসে জানাজায় ইমামতি করেন। তারপর আমরা তিনজন কর্মকর্তা ও পাঁচজন যুবক মিলে লাশ দাফন করলাম।’
অবশেষে করোনা সন্দেহে মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন হয়। লাশ দাফন শেষে ইউএনও নিজের ফেসবুক ঘটনাটি জানিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। ঘটনার বর্ণনার শেষে তিনি প্রশ্ন রেখে লেখেন, ‘শুধু একটি বিষয় অজানা রইল, পাঁচজন আলেম আমাদের কী শিক্ষা দিয়ে গেলেন, তা বুঝতে পারলাম না।’