পাউবো প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে খুশি করার অভিযোগ
সুনামগঞ্জে বছরজুড়ে আলোচনায় থাকে একমাত্র বোরো ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ নিয়ে। আর এই বাঁধের কাজে ২০৪ কোটি টাকার দুর্নীতি ঢাকতে সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে খুশি করার অভিযোগ উঠেছে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে।
গতকাল শনিবার (১৫ এপ্রিল) ফসলরক্ষা বাঁধ পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুশী মোহন সরকার, নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদারসহ অন্য কর্মকর্তারা। পরে রাতেই গণমাধ্যমকর্মীদের ১০ হাজার করে টাকা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে।
এদিকে, নিয়মিত কার্যক্রম হিসেবে সংবাদকর্মীরা যান তাঁদের সঙ্গে। কর্মকর্তারা বাঁধের কাজ শেষ ঘোষণা দিয়ে চলে আসেন, সংবাদকর্মীরাও যার যার কর্মস্থলে ফিরে আসেন। হঠাৎ সন্ধ্যার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শুরু হয় সমালোচনা। ফোনে ডেকে ডেকে চলতি অর্থবছরের সুনামগঞ্জের হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ ও অনিয়ম দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ না করতে সাংবাদিকদের উপঢৌকন দেওয়া হচ্ছে—এমন স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায়। অভিযোগ ওঠে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদের বিরুদ্ধে।
এ সময় বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন ও পত্রিকার ১৮ জন সাংবাদিককে ১০ হাজার করে টাকা বিতরণ করার কথাও চাউর হয়। টাকা নিতে ফোন পাওয়া, কয়েকজন সংবাদকর্মী তা প্রত্যাখ্যানও করেন। এ সময় কোনো কোনো সাংবাদিক ওখানে যাওয়ার সংবাদও চাউর হয়।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী-২ মো. শামছুদ্দোহা বলেন, ‘হ্যাঁ, সাংবাদিকরা এসেছিলেন আমাদের অফিসে, তবে আমার রুমে কেউ আসেননি এবং তারা ওপর তলায় গেছেন, কিন্তু কেন গেছেন? সেটা জানি না।’
দৈনিক কালেরকণ্ঠের সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি শামস শামীম বলেন, “হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজের অনিয়ম দুর্নীতি তুলে না ধরতে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘অফিসে আসেন, আপনার জন্য সম্মানি আছে।’ তখন আমি সাফ বলে দেই, ‘এসবে কোনো দিন যাব না, টাকাও নেব না।’
সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি বিন্দু তালুকদার বললেন, ‘একজন জেলা কর্মকর্তা এত টাকা বিলি করেন কীভাবে? কতটাকা লুটপাট করে তিনি এত টাকা সাংবাদিকদের দিয়েছেন?’
সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মহিম বললেন, ‘বাঁধের কাজের শুরু থেকেই অনিয়মের নানা কথা ওঠে। এক সময় ঠিকাদারি প্রথা ছিল। তখন ছিল এক ধরনের, এখন আরেক ধরনের দুর্নীতি হয়। ২০০ কোটি টাকার কাজের অনিয়ম এক লাখ ৮০ হাজার টাকায় লুকোনোর চেষ্টা এটি।’
টিআইবির সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সহসভাপতি অ্যাডভোকেট খলিল রহমান বললেন, ‘দুর্নীতি বা অনিয়ম ঢাকতে গণমাধ্যমকর্মীদের টাকা দেওয়ার চেষ্টা হলে এটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টদের দুর্বলতা প্রকাশ পায়।’
সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি পঙ্কজ কান্তি দে বলেন, ‘সাংবাদিকরা যেকোনো মাঠ ভিজিটে বা পরিদর্শনে যেতে পারেন, এর প্রচলন আছে। তবে, আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকলে, এটি সঠিক কাজ হয়নি। ঘটনাটি লজ্জার।’
অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ‘এ সব ভুয়া কথাবার্তা। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। আমি কাউকে কোনো টাকা দিইনি।’
অফিস সময়ের বাইরে রাতে পাউবো অফিসে সাংবাদিকদের আনাগোনা কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে কড়া রোদের এই সময়ে তিনি নদীতে পানি বাড়া ও বন্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘পানি বৃদ্ধির খবর নিতে সবাই অফিসে এসেছিলেন।’
ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ জেলা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছি। যেকোনো কিছুতে আমরা তাদের সঙ্গে পাই। গত দিনও এমনই ছিল। রাতে হঠাৎ ফেসবুকে কিছু লেখালেখি দেখি, যা আমার জন্যও বিব্রতকর। এ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। প্রকৌশলী ভালো বলতে পারবেন।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুশী মোহন সরকারের কাছে টাকা দেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি এই ব্যাপারে কিছুই জানেন না। তবে, কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করা হবে।