এবারও বগুড়ায় অনেক কম দামে কোরবানির পশুর চামড়ার কেনাবেচা হয়েছে। এতে চামড়ার টাকার সুবিধাভোগীরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত  হয়েছেন। অনেক চামড়া রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বাসার সামনে পড়ে থাকলেও কেনার কেউ ছিল না। সরকার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারিত করে দিলেও তার ধারে কাছেও ছিল না খুচরা বাজার।

এদিকে, মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে কোরবানি দাতারা চামড়ার উপযুক্ত দাম পাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছে চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি। আর এ পরিস্থিতির জন্য আড়তদারদের কোন সিন্ডিকেট দায়ী নয় বলে দাবি করেছেন সমিতির নেতা আব্দুল মতিন সরকার।

বগুড়া সদরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার সকাল ৮টার পর থেকে গরু, ছাগল ও ভেড়া কোরবানি শুরুর পর থেকে চামড়া কেনাবেচা শুরু হয়। জেলা সদরে গরুর চামড়া প্রকারভেদে কেনাবেচা হয়েছে ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দরে ও ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ১৫-২০ টাকা। এছাড়া কিছু এলাকায় ছাগলের চামড়ার সঙ্গে ভেড়ার চামড়া ফ্রি দেওয়া হয়েছে।

বগুড়া শহরের কাটনারপাড়ার বাসিন্দা ইয়ামিন আজাদ বলেন, ‘আমি গ্রামের হাট থেকে ৮ হাজার ও ৯ হাজার টাকা দামের দুটি ছাগল কিনে কোরবানি দিয়েছি। সকালে ছাগল জবাইয়ের পর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ চামড়া কেউ কিনেনি। কসাইকে দিয়ে দিতে চাইলেও তিনি নেননি। ছাগলের চামড়া কেনার কাউকে পাওয়া যায়নি।’

ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা জিয়া শাহীন জানান, ৯৮ হাজার টাকায় কেনা গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকা এবং এক লাখ ২৫ হাজার টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৫শ টাকা। এছাড়া ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা ছাগলের চামড়া এক থেকে ১৫ টাকা করে কিনে গরুর চামড়ার সঙ্গে আড়তদারদের ফ্রি দিয়েছে।

চামড়ার চাহিদা একেবারেই ছিলই না জানিয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলা সদরের বাসিন্দা মামুনুর রশিদ রুবেল বলেন, '৮০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা দামের গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। এর নিচের দামের গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ছাগলের চামড়ার দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বেচাকেনা হয়েছে।'

মৌসুমী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কিনে শহরের বাদুরতলা থেকে শুরু করে সদর থানা মোড় পর্যন্ত পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে সাইজ অনুযায়ী গরুর চামড়া ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০ টাকা এবং ছাগলের চামড়া প্রতিটি ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন।

এ ব্যাপারে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী উপশহরের আলী আকবর জানান, আড়তে চামড়ার ন্যায্য দাম পাওয়া যায় না। তাই যে যার মতো দামে নিজ নিজ মহল্লা থেকে চামড়া কেনে। এখানে কোনো কারসাজি নেই।

বগুড়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকার বলেন, 'ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বগুড়ার চামড়ার ব্যবসায়ীদের বকেয়ার পরিমাণ ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা। এবারও কোনো বকেয়া পরিশোধ করেনি। তবুও ব্যবসা ধরে রাখার স্বার্থে চামড়া কেনাবেচা করা হচ্ছে।'

আড়তে সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া কেনা হচ্ছে দাবি করে আব্দুল মতিন বলেন, ‘আমরা মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতি পিস চামড়া গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে কিনছি। কিন্তু মৌসুমী ব্যবসায়ীরা কারসাজি করলে আমাদের কিছু করার নেই। তারা পাড়া মহল্লা থেকে কম দামে কিনে আড়তে সঠিক দামেই বিক্রি করছেন।’

আব্দুল মতিন সরকার আরও বলেন, 'কাঁচামালে কোনো সিন্ডিকেট হয় না। চামড়ার বাজার কম হওয়ার অন্যতম কারণ হলো ট্যানারি মালিকদের কাছে আমাদের ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা পড়ে থাকা।'

এদিকে, চামড়ার দাম কম হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বগুড়ার আলেম সমাজ। তারা জানিয়েছে টাকার অভাবে অনেক ফোরকানিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় আর্থিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।

বগুড়া জেলা ইমাম ও মুয়াজ্জিন সমিতির সভাপতি ও শহরের বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল জামে মসজিদের খতিব মুফতি মাওলানা আব্দুল কাদের বলেছেন, ‘চামড়ার টাকা বেশিরভাগ কোরবানিদাতারা এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দান করেন। এতে এতিমখানাগুলোর আর্থিক সমস্যা কমে।'