বগুড়া-১ আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌঁড়ঝাপ

বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের মৃত্যুর পর সেখানে কে হচ্ছেন নৌকার পরবর্তী প্রার্থী, এ নিয়ে এলাকায় চলছে গুঞ্জন।
আবদুল মান্নানের অনুসারীরা এ আসনে আবদুল মান্নানের স্ত্রী বা ছেলেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চাইছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরব তাঁর কর্মী-সমর্থকরা। তবে মান্নানের পরিবারের বাইরেও সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে।
অন্যদিকে আসনটি পুনরুদ্ধারের সুযোগ কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। আগামী উপনির্বাচনে এ আসনে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে তিনজনের নাম আলোচনায় রয়েছে। উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও এখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে যে লড়াই হবে তা প্রায় নিশ্চিত।
সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-১ আসনের সদ্যপ্রয়াত সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করে ২০০৮ সালে প্রথম নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালে এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
টানা তিনবার সংসদ সদস্য হয়ে আবদুল মান্নান দুই উপজেলায় রাস্তাঘাট সংস্কার, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ, চাকরি, শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করেছেন। এতে দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রচুর সমর্থক তৈরি হয়েছে।
গত ১৮ জানুয়ারি আবদুল মান্নানের মৃত্যুর পর সব জায়গায় আলোচনা চলছে, আবদুল মান্নানের অবর্তমানে কারা হচ্ছেন এ আসনের যোগ্য প্রার্থী? এর মধ্যে শোনা যাচ্ছে বেশ কয়েকজনের নাম।
স্থানীয়রা বলছেন, আবদুল মান্নানের স্ত্রী সাহাদারা মান্নান শিল্পী সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য হয়ে কাজ করছেন। তাদের একমাত্র ছেলে মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সজল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। উপজেলার নেতাকর্মীদের আশা, মা অথবা ছেলে এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন। দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে সাহাদারা মান্নান শিল্পীর প্রচারও চালাচ্ছেন। কারণ, তিনি সশরীরে এলাকার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত আছেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘মান্নানের অবর্তমানে তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য দলীয় প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আসনটি ধরে রাখতে তাঁর পরিবারকে নৌকার কাণ্ডারি করার বিকল্প নেই।’
ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আব্দুল মান্নানের ভায়রাভাই ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা ও ব্যবসায়ী ম. আবদুর রাজ্জাকও আলোচনায় রয়েছেন। তবে আবদুর রাজ্জাকের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের একটি অংশের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকেই প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সারিয়াকান্দি পৌরসভার মেয়র আলমগীর শাহী সুমন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিও মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে ছিলেন। এবারও তিনি মাঠে নেমেছেন।
মনোনয়নপ্রত্যাশী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আবদুল মান্নান দলকে সুসংগঠিত করেছেন। তাঁর অবর্তমানে স্ত্রী সাহাদারা মান্নানই নৌকার প্রার্থী হোক এটা ব্যক্তিগত চাওয়া। তবে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নৌকার কাণ্ডারি হিসেবে যাকে যোগ্য মনে করবেন, তাঁর পক্ষেই কাজ করব। দলের প্রয়োজনে তিনি আমাকে মনোনয়ন দিলে প্রার্থী হব।’
এদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হারানো এই আসনটি আবারও উদ্ধারে মাঠে নেমেছেন। তাঁরাও প্রচার করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের পছন্দের নেতাদের নাম প্রচার করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে শোনা যাচ্ছে, বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ কাজী রফিকুল ইসলামের নাম। তাঁর নামটি বেশি প্রচার হচ্ছে। নেতাকর্মীরা তাঁর পক্ষে বিএনপির মনোনয়ন চেয়ে ভিতরে ভিতরে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
কাজী রফিকুল ইসলাম বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়ন ও নদীভাঙন কবলিত মানুষের উন্নয়নে তিনি বড় ভূমিকা রাখেন। সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাঁর সখ্যও বেড়েছে আগের থেকে বেশি।
এ ছাড়া মনোনয়ন চেয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন জিয়া শিশু-কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন চৌধুরী। মাঝে-মধ্যেই তিনি এলাকায় এসে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।
সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকির ও বগুড়া ড্যাবের সভাপতি ডা. শাহ মো. শাজাহান আলীও প্রার্থিতার জানান দিয়েছেন।
প্রচারে আছেন সারিয়াকান্দি উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অধ্যক্ষ মোকছেদুল আলম। জাপার একক প্রার্থী হিসেবে তিনি এবার মাঠে নেমেছেন। বিভিন্ন এলাকায় তিনি দোয়াও চেয়েছেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সিরাজুল ইসলাম সুরুজ। ১৯৭৯ সালে বিএনপির অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ হোসেন তরফদার, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির কর্নেল (অব.) আব্দুল মোমিন মণ্ডল, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিএনপির ডা. হাবিবুর রহমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাজী রফিকুল ইসলাম বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচিত হন। ২০০৮, ২০১৪ এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রাথী আব্দুল মান্নান বিজয় পেয়েছিলেন।
জেলা নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, বগুড়া-১ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ আট হাজার ৯০২ জন। এর মধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলার ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৬৭ হাজার ৭৮২ জন এবং সোনাতলা উপজেলার ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৪১ হাজার ১২০ জন।
এ ছাড়া খুব শিগগিরই নির্বাচন কমিশন এই আসনের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।