বন্ধুবেশে খুন, অটো নিয়ে চম্পট

বগুড়ায় টাকার জন্য বন্ধুকে খুন করে লাশ গুম করার অভিযোগ উঠেছে আরেক বন্ধুর বিরুদ্ধে। পরে অভিযুক্ত বন্ধুর স্বীকারোক্তিতে একটি ধানের ক্ষেত থেকে লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত বন্ধুর নাম মিনহাজ (২০)। অভিযুক্ত তরুণের নাম ফজলে রাব্বী (২০)। বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মিনহাজ (২০) ধুনট উপজেলার বিশ্ব হরিগাছা গ্রামের মো. মোজদার হোসেনের ছেলে।
আটক ফজলে রাব্বির স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, নিহত মিনহাজ ও ফজলে রাব্বী বন্ধু ছিলেন। একবার মিনহাজ বন্ধু রাব্বীকে নিয়ে কাজিপুর থানার সোনামুখীতে এক মেয়ের কাছে যান। এ সময় মিনহাজ ওই মেয়ের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হলে মোবাইলে সেই সময়ের ছবি তোলেন রাব্বী। সেই ছবি নিয়ে মিনহাজকে ব্লাকমেল করতে থাকেন রাব্বি। হঠাৎ করে রাব্বীর টাকার দরকার পড়ে। তিনি মিনহাজকে হত্যা করে তাঁর অটোরিকশাটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাব্বী গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে বিশ্বহরিগাছা বাজারের একটি ওষুধের দোকান থেকে তিনটি ঘুমের ট্যাবলেট কিনেন। ওই দিন বিকেলেই মিনহাজকে ফোনে ডেকে নেন। এরপর তারা দুজনে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে রাত ৮টার দিকে শেরপুরের জোরগাছা এলাকায় পৌঁছেন। সেখানে দোকান থেকে রাব্বী একটি কোল্ডড্রিংকস কিনে তাঁর মধ্যে ঘুমের বড়িগুলো মিশিয়ে নেন। এক পর্যায়ে তারা অটোরিকশাটি একটি বাড়ির সামনে রেখে একটি ধানক্ষেতের মাঝখানে যান। সেখানে রাব্বী সেই কোল্ডড্র্রিংকস মিনহাজকে খেতে দেন। সেখানে তারা ১০ মিনিট বসে থাকেন। এক সময় মিনহাজ ঘুমিয়ে পড়লে রাব্বী মিনহাজকে চাকু দিয়ে হত্যা করেন। পরে রাব্বী মিনহাজের মোবাইল ফোন ও চাকু ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে সেখান থেকে চলে আসেন।
পরে রাব্বী শেরপুর বটতলায় একটি দোকানে যান অটোরিকশাটি বিক্রির জন্য। কিন্তু দোকানদার অটোরিকশাটি কিনতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় বিভিন্ন স্থানে অটোরিকশাটি বিক্রির চেষ্টা করেন। কিন্তু বিক্রি না হওয়ায় অটোরিকশাটি ধুনট থানার একটি নির্জনস্থানে ফেলে শেরপুর হাসপাতালে ভর্তি হন রাব্বি।
পরে রাব্বী ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেন। তাঁর বন্ধু মিনহাজ ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছিল এবং তাঁর শত্রুরা ধরে নিয়ে গেছে বলে জানান। তাঁর এই অভিযোগে তদন্ত শুরু করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুর রশিদ এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমানসহ শেরপুর ও ধুনট থানার পুলিশের কয়েকটি টিম।
একপর্যায়ে রাব্বীর কথা তাদের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়। এরপর রাব্বীকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বন্ধুকে নিজে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফসহ পুলিশের একটি টিম রাব্বীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় রাব্বী মিনাহাজকে খুন করার সেই জায়গা দেখিয়ে দেন। পুলিশ সেখান থেকে মিনহাজের লাশ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।