ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনজীবীদের আদালত বর্জন, বিপাকে বিচারপ্রার্থীরা
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/01/05/braahmnnbaarriyyaa-chbi.jpg)
দুই বিচারকসহ নাজিরের অপসারণ চেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব আদালত তিন দিনের জন্য বর্জন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন আইনজীবীরা। আজ বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) সকাল থেকে আদালত বর্জন করে জেলা আইনজীবী সমিতির সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তাঁরা। এতে জেলা জজ আদালত, চিফ জুডিশিয়াল আদালতসহ সবকটি আদালতের বিচারিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। দূর দূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীরা পড়ছেন বিপাকে। এদিকে, এ নিয়ে তিন আইনজীবীর হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর ভুইয়া, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম লিটন, মাহবুবুল আলম খোকন প্রমুখ।
বক্তারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-১-এর বিচারকের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ এনে বলেন, ‘গেল ১ ডিসেম্বর বিকেলে মামলা করতে গেলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-১-এর বিচারক মামলাটি গ্রহণ না করে জেলার সব আইনজীবীদের নিয়ে আপত্তিকর ও অপমানজনক মন্তব্য করেন। এর আলোকে ২৬ ডিসেম্বর সভা করে ১ জানুয়ারি থেকে সংশ্লিষ্ট আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা আইনজীবী সমিতি। সেইসঙ্গে দুর্নীতির অভিযোগে আদালতের নাজির মুমিনকে প্রত্যাহারের দাবি জানায়। অথচ তাঁকে রক্ষায় জেলা জজের ইন্ধনে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করেছে বিচার বিভাগীয় কর্মচারীরা।’ এর পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি দাবিতে তিন দিনের জন্য সব আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আইনজীবীরা। দাবি আদায় না হলে কর্মসূচি চলমান থাকবে বলেও জানান তাঁরা।
এ বিষয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘সময় পার হয়ে যাওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১-এর বিচারক মামলাটি নেননি। তবে, এ কারণে একজন বিচারককে আইনজীবীরা যেভাবে অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ তাঁর সঙ্গে আচরণ করেছেন, তা দুঃখজনক। এই আচরণ আইন পরিপন্থি।’
আইনজীবী কর্তৃক জেলা জজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা উল্লেখ করে মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘জেলা জজকে নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য সংবিধান পরিপন্থি।’
এদিকে, আজ বিকেলে হাইকোর্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সম্পাদকসহ তিন আইনজীবীর প্রতি আদালত অবমাননার রুল জারি করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর এজলাসে হট্টগোল, বিচারক ও আদালতের কর্মচারীদের ‘গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের’ অভিযোগে এই রুল দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আদালত অবমাননার স্বপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দিয়েছেন।
এ বিষেয় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গত ২ জানুয়ারির ঘটনায় ভিডিও সংবলিত পেনড্রাইভ রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে রয়েছে। তা সংরক্ষণ করতে, শুনানির সময় প্রয়োজন হলে তা দাখিল করতে বলা হয়েছে।’
রুলে তিন আইনজীবীর বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে তিন আইনজীবীকে ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়েছে। তিন আইনজীবী হলেন—ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. তানভীর ভূঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) মো. আক্কাস আলী ও আইনজীবী জুবায়ের ইসলাম।
২ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর এজলাসে হট্টগোলের ঘটনা ঘটে।