মরিয়ম মান্নানের মা ফরিদপুর থেকে জীবিত উদ্ধার
খুলনার দৌলতপুর থেকে নিখোঁজ হওয়া রহিমা বেগমকে ফরিদপুর থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। দৌলতপুরের বণিকপাড়া থেকে থেকে ২৯ দিন আগে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল ওহাব বলেন, ‘খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল বোয়ালমারী ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করেছে।’
শনিবার দিবাগত রাত ১১টা ২৫ মিনিটে তাকে উদ্ধার করে রাত ২টার পর তাকে খুলনার দৌলতপুর থানায় আনা হয়। রহিমা বেগমের সঙ্গে কুদ্দুসের বাড়ির তিন জনকে নিয়ে এসেছে পুলিশ।
দৌলতপুর থানায় শনিবার মধ্য রাতে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘নিখোঁজ রহিমা বেগম ১৭ সেপ্টেম্বর বোয়ালমারী যান। তার পরিচিত এবং ভাড়াটিয়া কুদ্দুসের বাসায় অবস্থান করছিলেন। তাদের বলেছিলেন পারিবারিক গোলযোগের কারণে বাড়ি ছেড়ে এসেছেন। তার সঙ্গে মোবাইল ছিল না। কুদ্দুসের বাসায় থাকাকালে রহিমা বেগম গল্প করলেও পুলিশ উদ্ধারের পর কোনো কথাই বলছেন না। উদ্ধারের ঘটনা জানার পর এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের স্বজনেরা থানায় আসেন।’
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) খুলনার পুলিশ সুপার মুশফেকুর রহমান জানান, মামলার তদন্তের স্বার্থে রহিমা বেগমকে পিবিআইয়ে নিয়ে এবং পরে আদালতে প্রেরণ করে তার জবানবন্দি নেওয়া হবে।
গত ২৭ আগস্ট রাত ১১টার দিকে দৌলতপুর খানাবাড়ি হতে নিখোঁজ হন ছয় সন্তানের এই জননী। সে রাতে রহিমা বেগম তার প্রয়াত প্রথম স্বামীর বাড়িতে দ্বিতীয় স্বামী বেলাল হাওলাদারকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন বলে জানায় পুলিশ। নিখোঁজের কয়েক ঘণ্টা পর তার ছেলে সাদি দৌলতপুর থানার একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) অন্তর্ভুক্ত করেন। পরদিন নিখোঁজ রহিমা বেগমের ছোট মেয়ে আদুরী আক্তার অজ্ঞাতদের নামে একটি মামলা করেন। এ মামলার এজহারে জমিজমা নিয়ে বিরোধের কথা বলে পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। নিখোঁজ হওয়ার পর পরিবারের পক্ষ হতে বিশেষ করে ঢাকা তেজগাঁও কলেজের ছাত্রী মরিয়ম মান্নান খুলনা ও ঢাকায় একাধিক সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধনসহ নানাবিধ কর্মসূচি পালন করেন।
পুলিশ জমিজমার বিরোধের অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের নির্দেশে রিমান্ডে নেয়। পরে পুলিশ রহিমা বেগমের দ্বিতীয় স্বামী বেলাল হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। প্রথম থেকেই মামলাটি দৌলতপুর থানা পুলিশ এবং র্যাব তদন্ত করছিল। এ তদন্ত পছন্দ না হওয়ায় বাদী পক্ষের আবেদনে মামলার তদন্ত পিবিআই খুলনাকে দেওয়া হয়। পিবিআই আত্মগোপনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করলে বাদীরা নাখোশ হন।
গত বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে খুলনা মরিয়ম মান্নান তার মা রহিমা বেগমের [৫২] লাশ পেয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জানান। ময়মনসিংহের ফুলপুরে অজ্ঞাত নারীর লাশের ছবি দেখে সেটি তার মা বলে দাবি করেন। যদিও ফুলপুর থানা পুলিশ বলছিল, ১০ সেপ্টেম্বর লাশ উদ্ধার হওয়া নারীর আনুমানিক বয়স ৩০ থেকে ৩২ বছর। অথচ মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগমের বয়স ৫২ বছর।
ওই নারীর ডিএনএ নমুনা রেখে দুদিন পরই দাফনের ব্যবস্থা করেছিল ফুলপুর থানা পুলিশ। শুক্রবার বোনদের নিয়ে মরিয়ম মান্নান ফুলপুর থানায় গিয়ে ওই নারীর পাজামা ও চুল দেখে নিশ্চিত করেন এটি তার মায়ের লাশ। তারা ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য আবেদনও করবেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে কথা বলতে মরিয়ম মান্নানসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলেও তারা কেউ রিসিভ করেননি।