ময়মনসিংহের সেই শিশুকে নিজেদের কাছে নিতে চান স্বজনেরা

ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েও অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যাওয়া চিকিৎসাধীন শিশুটিকে নিজেদের কাছে পেতে চান স্বজনেরা। তাঁরা বলছেন, প্রতিদিন অন্য প্রসূতিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে হাসপাতালে শিশুটির জন্য সরবরাহ করতে হয়। স্বজন ও দুধদাতা প্রসূতি—উভয়ের জন্যই এটি বড় ধরনের সমস্যা। কিন্তু, চিকিৎসক বলছেন—শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়ার সময় এখনও হয়নি।
গত সোমবার রাতে শিশুটিকে লাবীব হাসপাতাল থেকে মমেক হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে ভর্তি করা হয়। সে সময় জন্ডিসসহ শিশুটির কিছুটা শ্বাসকষ্টও ছিল। এ ছাড়া হাড়েও চিড় ছিল। সেসব সমস্যা কমে এসেছে। তাকে ফটোথেরাপি দেওয়া হয়েছে। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে। কিন্তু, শিশুর দুধপান করা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। লাবীব হাসপাতালের প্রসূতি মায়েদের কাছ থেকে দুধ নিয়ে প্রতিদিন হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে দিয়ে আসতে হচ্ছে। এদিকে, মায়েরা স্তন্যপান করাতে আপত্তি না জানালেও আলাদাভাবে স্তনজাত দুগ্ধ সরবরাহে রাজি হচ্ছেন না।
অন্যদিকে, স্বজনেরা বলছেন, তাঁরা একজন প্রসূতি মা পেয়েছেন, যিনি বাড়িতে এসে শিশুটিকে স্তন্যপান করাতে রাজি হয়েছেন। এজন্য শিশুটিকে ছাড়পত্রের মাধ্যমে নিজেদের কাছে পেতে চাইছেন স্বজনেরা।
মমেক হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক এবং শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. নজরুল ইসলাম বলছেন, শিশুটিকে ছাড়পত্র দেওয়ার মতো পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি। মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছাড়া তাকে ছাড়পত্র দেওয়া যাচ্ছে না।
গত শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ত্রিশাল উপজেলার কোর্টভবন এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান অন্তঃসত্ত্বা রত্না বেগম (৩২), তাঁর স্বামী জাহাঙ্গীর আলমসহ (৪০) তাঁদের ছয় বছরের মেয়ে সানজিদা। প্রসবের নির্ধারিত সময় অতিক্রম করায় আলট্রাসনোগ্রাম করানোর জন্য ত্রিশালের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেখান থেকে ফেরার পথে ট্রাকচাপায় ঘটনাস্থলেই ওই তিন জনের মৃত্যু হয়। তবে, সে সময় অবিশ্বাস্যভাবে মায়ের গর্ভ ফেটে ভূমিষ্ঠ হয় ফুটফুটে এক নবজাতক। শিশুটিকে দেখে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান পুলিশ ও আশপাশের লোকজন। পরে নবজাতকটিকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে নেওয়ার পরই জানা যায় জীবিত রয়েছে নবজাতক কন্যাশিশুটি।
এদিকে, গ্রেপ্তার করা ট্রাকচালক রাজু আহমেদ শিপনকে দুদিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। গত বুধবার রাতে তাঁকে ত্রিশাল থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।