শুধু ভুলত্রুটি নয়, সাফল্যেরও প্রচার প্রয়োজন, সাংবাদিকদের তথ্যমন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘দেশ পরিচালনায় সাফল্যের পাশাপাশি কিছু ভুলত্রুটি থাকে, কারণ কোনো সরকার পৃথিবীতে শতভাগ নির্ভুল কাজ করতে পারে না। অতীতেও পারেনি, এখনও পারবে না, ভবিষ্যতেও না। সে কারণেই শুধু ভুলত্রুটি নয়, সাফল্যটাও তুলে ধরতে হয়।’
আজ রোববার (৫ মার্চ) রাজধানীর কাকরাইলে তথ্যভবন মিলনায়তনে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের বার্তাপ্রধান ও সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যেও আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বিরোধীদলের কথা শুনলে তা মনে হয় না। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ওই পারে গিয়ে তারা বলে যে, দেশে কোনো উন্নয়ন হয়নি। সেই বক্তব্যগুলো আবার সবক’টি টেলিভিশনে ভালোভাবে প্রচার হয়। সবার বক্তব্যই প্রচার হতে পারে, কিন্তু সত্যি ঘটনাটাও প্রচার হতে হবে, তাহলে মানুষ সঠিক উপসংহারে উপনীত হবে।’
তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর বার্তা প্রধান ও সম্পাদকবৃন্দ বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠক সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে মালিকদের কথা শুনতে হয়, কিন্তু ডে-টু-ডে অ্যাফেয়ার, আওয়ার-টু-আওয়ার অ্যাফেয়ার বার্তাপ্রধানরা, সম্পাদকরা করেন। কোন সংবাদটা যাবে বা যাবে না, কতটুকু যাবে, কোন বাইট যাবে, সেটি আপনারাই নির্ধারণ করেন। সুতরাং, গণমাধ্যমে কী পরিবেশন হচ্ছে, সেই নিয়ন্ত্রণটা আপনাদের হাতে। এ জন্যই আপনাদের সঙ্গে আমি বসতে চেয়েছি।’
‘বাংলাদেশে বেসরকারি টেলিভিশনের যাত্রাটাই শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমার জানামতে ৩৬টি প্রাইভেট টেলিভিশন সম্প্রচারে আছে। আরও কয়েকটি খুব সহসা সম্প্রচারে আসবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে আমাদের দেশে গত ১৪ বছরে বেসরকারি টেলিভিশন, রেডিও, পত্রিকা এবং অনলাইন সংবাদ পোর্টাল সবকিছুর এক্সপোনেনসিয়াল গ্রোথ হয়েছে এবং মেধাবীরা কাজের সুযোগ পেয়েছেন। প্রাইভেট টেলিভিশন ১০টি থেকে ৩৬টি, দৈনিক কাগজের সংখ্যা সাড়ে ৪০০ থেকে ১২৫০, হাতেগোনা কয়েকটি থেকে অনলাইন পোর্টাল কত হাজার, সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়।’
‘মানুষের মনন, দেশ, সমাজ গঠনে ও রাষ্ট্র পরিচালনায় টিভি চ্যানেলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যম মানুষের মনন তৈরি করে, মানুষের কাছে সমাজের বিশ্বের চিত্র পরিস্ফুটন করে এবং তা থেকে মানুষ তার ধারণাটা তার নিজের কল্পে সংগ্রহ করে। সেজন্য গণমাধ্যমে কীভাবে সংবাদ পরিবেশন হচ্ছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে টেলিভিশনের দায়িত্ব আমাদের সংস্কৃতিচর্চা এবং সমাজের অনুন্মোচিত বিষয়গুলো উন্মোচন করা।’
নিজ মন্ত্রণালয় সম্পর্কে মন্ত্রী ড. হাছান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার পর আমি চেষ্টা করেছি গণমাধ্যমকে সুরক্ষা দেওয়া জন্য। দেশের টেলিভিশনের কোনো সিরিয়াল ছিল না, সেটা আমরা শুরুতেই ঠিক করেছি। বিদেশি টেলিভিশনে অবৈধ বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে পারব কেউ ভাবেনি, টেলিভিশনের মালিকপক্ষও ভাবেনি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে, এমনকি ভারতের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীকেও জানিয়ে সেটি আমরা কঠোর হস্তে করেছি। ৩০ বছর পর আমি দায়িত্ব নিয়ে সারা ভারতবর্ষে ফ্রি ডিটিএইচ ডিসের মাধ্যমে বিটিভি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের শিল্পীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য টিভি চ্যানেলগুলোতে বিদেশি সিরিয়ালের যথেচ্ছ প্রচার নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে, বিজ্ঞাপনে বিদেশি শিল্পীদের ক্ষেত্রে বাড়তি কর দেওয়ার বিধান চালু করেছি।’
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না’ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেবরা ২০১৮ সালের আগেও একই ধরণের বক্তব্য রেখেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত বিশাল জোট করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তখন মানুষ বলেছিল—গাধা জল ঘোলা করে খায়। এবারও তারা একই কথা বলছেন।’
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশে নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ নির্বাচন হবে। আমরা চাই বিএনপিসহ সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক এবং বিএনপি তাদের জনপ্রিয়তা যাচাই করুক। নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও থাকবে। সুতরাং, তাদের নির্বাচন নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আশা করব, তারা নির্বাচনভীতি কাটিয়ে উঠে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।’
সংবাদপত্রে চাকরিরতদের জন্য ওয়েজবোর্ড আছে, কিন্তু বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো নেই প্রশ্নে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘ওয়েজবোর্ড সংসদে পাশ করা আইন, যা পরিবর্তন করতে হলে আইনটিই পরিবর্তন করতে হবে। সম্প্রচারমাধ্যমসহ সব গণমাধ্যমকর্মীর আইনি সুরক্ষার জন্য গণমাধ্যমকর্মী আইনের খসড়া তৈরি হয়েছে। এটি পাস হলে সেই সুরক্ষা হবে।’