সাতকানিয়ার আলোচিত আব্দুল হক হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট আদালতে
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কেওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হক মিয়াকে হত্যার ঘটনায় কর্মচারী জমির উদ্দিনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, আব্দুল হক মিয়াকে হত্যার জন্য ওদিন রাতেই পরিকল্পনা করেছিলেন কর্মচারী জমির উদ্দিন। পরে ভোররাতে ঘুমন্ত অবস্থায় লোহার রড দিয়ে আব্দুল হকের মাথায় আঘাত করে। ৮০ বছর বয়সী আব্দুল হক মিয়া চিৎকার দিলে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন জমির। এর আগে জমির উদ্দিনকে বেতন বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বললে রাগান্বিত হয়ে গালাগাল দেন আবদুল হক মিয়া। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে খুন করা হয় তাঁকে।
পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা মামলাটির তদন্ত শেষে চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় অভিযুক্ত জমির উদ্দিন বাশখালী পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের হাবিবুর রহমানের ছেলে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিরাজুল মোস্তফা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, ‘সাতকানিয়ার কেওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হক মিয়ার বাড়িতে দীর্ঘদিন থেকে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন জমির উদ্দিন। গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে বাড়িতে ছিলেন না আব্দুল হক মিয়ার সন্তানরা। অসুস্থতায় চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন ছিলেন স্ত্রী। বাড়িতে ছিলেন শুধু আব্দুল হক মিয়া ও কর্মচারী জমির উদ্দিন।
রাতে আব্দুল হক মিয়া অসুস্থতা বোধ করলে তাঁকে নেবুলাইজ করার জন্য শয়নকক্ষে আসেন কর্মচারী জমির। নেবুলাইজ করার সময় জমির উদ্দিন বেতন বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বলেন। এসময় জমিরকে উত্তেজিত হয়ে গালাগাল দেন আব্দুল হক মিয়া। তখন নেবুলাইজ না করে জমির উদ্দিন নিজের কক্ষে চলে যাযন। রাতেই আব্দুল হক মিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। শেষ রাতের দিকে আব্দুল হক মিয়াকে ঘুমন্ত অবস্থায় লোহার রড (খুরাবাড়ি) দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। তখন আব্দুল হক মিয়া চিৎকার দিলে আবারও আঘাত করা হয়। একপর্যায়ে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে।
পরে বিষয়টি ডাকাতি বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য নিজের শরীরে নিজে আঘাত করে। নিজের হাত-পা নিজেই বেঁধে শুয়ে থাকেন। সকালে গৃহকর্মী এসে দরজা বন্ধ পায়। পরে পেছনের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকে জমিরের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেখতে পায়। তখন জমির জানায়, ডাকাতরা আব্দুল হক মিয়াকে খুন করেছে।
গৃহকর্মী দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে আশপাশে লোকজনকে ডাকাডাকি করে বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে থানা পুলিশ এসে জমিরকে উদ্ধার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেন।
পুলিশের তথ্য বিশ্লেষণে জমিরের কথায় অসঙ্গতি তৈরি হলে তাঁকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।
পরে মামলাটি তদন্ত শেষে সাতকানিয়া থানার উপপরিদর্শক শেখ সাইফুল ইসলাম ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর একই কথা উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সেই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে বাদী নেজাম উদ্দিন নারাজি দিলে আদালত এটি পুনরায় তদন্তের জন্য পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘আমি মামলাটির তদন্ত শেষে কর্মচারী জমির উদ্দিনকে আসামি করে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছি। বিজ্ঞ আদালত পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’
মামলার বাদী নেজাম উদ্দীন বলেন, ‘পিবিআইয়ের দেওয়া চার্জশিট আদালত গ্রহণ করে বিচারের জন্য মামলাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়েছে।’