পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘটে অচল দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা

মহাসড়কে পুলিশের হয়রানি ও চাঁদাবাজি বন্ধসহ ১২ দফা দাবিতে আজ সোমবার সকাল থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু হয়েছে। যানবাহনের চাকা বন্ধ থাকায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহনও বন্ধ হয়ে গেছে।
বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
মুহাম্মদ আবু তৈয়ব, খুলনা : ধর্মঘটের কারণে খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় সোনাডাঙ্গা ট্রাক টার্মিনালসহ ২১ জেলার বিভিন্নস্থানে আটকা পড়েছে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব আবদুর রহিম বক্স দুদু জানান, রোববার পর্যন্ত আল্টিমেটাম থাকলেও তাদের দাবি মেনে নেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে তারা পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ সোমবার থেকে সব পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছে। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকলরিও ধর্মঘটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
সংগঠনের আহ্বায়ক আবদুল গফফার বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের দাবি ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত। আমরা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও সেদিকে তারা নজর দেয়নি। এ কারণে অনির্দিষ্টকালের কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি। দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।’
এর আগে গত শনিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ধর্মঘটের ডাক দেয় সংগঠনটি।
সঞ্জিব দাস, ফরিদপুর : ধর্মঘটের কারণে ফরিদপুরে ভোর থেকেই কোনো ট্রাক-লরি ছেড়ে যায়নি। ফরিদপুর ট্রাক ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সভাপতি কাজী আবদুল আলিম বলেন, ‘আমরা এই অঞ্চলের ২১ জেলার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ধর্মঘটে নেমেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ধর্মঘট চলবে।’
এদিকে ধর্মঘট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার পণ্য আনা-নেওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।
মাহবুব হোসনে সারমাত, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জ থেকে পণ্যবাহী কোনো পরিবহন ছেড়ে যায়নি। পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মীদের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পিকেটিং করতে দেখা গেছে। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছে তারা।
শফিকুল ইসলাম শফিক, মাগুরা : দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলায় ডাকা ট্রাক ধর্মঘটের কারণে মাগুরার কাচাবাজারে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
আজ দুপুরে মাগুরা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও কাঁচাবাজারের সভাপতি আকরাম হোসেন মোল্ল্যা জানান, সবজিসহ সব মালবাহী ট্রাকে পুলিশের হয়রানি ও ফেরিঘাটে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে ধর্মঘট চলছে। মাগুরা থেকে প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১২ থেকে ১৫টি সবজির ট্রাক গেলেও আজ তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী বিদ্যুৎ মণ্ডল জানান, ট্রাক ধর্মঘটের কারণে সাড়ে চার হাজার টাকার ভাড়া পাঁচ হাজার ২০০ টাকা হয়েছে।
আড়তদার বাবু মোল্ল্যা জানান, ট্রাক ধর্মঘটের কারণে বাইরে থেকে আলু কম আসছে, ফলে দাম একটু বেশি।
সবজি চাষি হাসান বিশ্বাস জানান, আজকের বাজারে শীতের সবজি, শিম, লাউ, টমেটো, কপিসহ সব সবজির দাম কম বলছে ব্যাপারীরা। ধর্মঘট বাড়তে থাকলে দাম আরো পড়ে যাবে।
ট্রাক-লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বাহারুল ইসলাম জানান, সরকার অবিলম্বে সড়কে পুলিশি হয়রানি, ফেরিঘাটে চাঁদাবাজি বন্ধসহ অন্যান্য দাবি মেনে নিলে ধর্মঘট প্রত্যার করা হবে।
আবু হোসাইন সুমন, মোংলা : ভোর থেকে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন ও সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। ধর্মঘট দীর্ঘস্থায়ী হলে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর এ কে এম ফারুক হাসান।
এদিকে পণ্য পরিবহন ধর্মঘটে ইপিজেডসহ স্থায়ী বন্দর এলাকার সিমেন্ট, গ্যাস ও তেলসহ বিভিন্ন কল কারখানার পণ্য পরিবহন, সরবরাহ বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
সুভাষ চৌধুরী, সাতক্ষীরা : পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘটের ফলে সকাল থেকে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর স্থবির হয়ে পড়েছে। পরিবহনের অভাবে ভোমরা স্থল বন্দরের বিপরীতে ভারতের ঘোজাডাঙ্গায় আমদানি পণ্য বোঝাই করে পাঁচ শতাধিক ভারতীয় ট্রাক আটকে রয়েছে। আমদানিপণ্যসহ কিছু ভারতীয় ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও পণ্য খালাস হচ্ছে না।
সাতক্ষীরা জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানান, সড়কজুড়ে ট্রাকের ওপর পুলিশের অত্যাচার বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই ট্রাক থামিয়ে জোর করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এসবের প্রতিবাদে তাদের ডাকে পণ্য পরিবহন ট্রাক ধর্মঘট শুরু হয়েছে।
সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু জানান, ধর্মঘটের কারণে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছে।
ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাবু জানান, এ ধর্মঘট অনির্দিষ্টকালের। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।