ভৈরবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বাসায় ডাকাতি
ভৈরব শহরের স্টেডিয়ামপাড়ায় এক সরকারি কর্মকর্তার বাসায় ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতরা অস্ত্র দেখিয়ে পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা, সাড়ে পাঁচ ভরি স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোখলেছুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে জানান, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, রাত ২টার দিকে ভৈরব শহরের উত্তর ভৈরবপুর এলাকার স্টেডিয়াম পাড়ার ‘জজ মিয়া ভবনের’ তৃতীয় তলার ভাড়াটিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবু সাঈদের বাসায় একদল ডাকাত হানা দেয়। এ সময় অস্ত্র দেখিয়ে পরিবারের লোকজনদের বেঁধে ও জিম্মি করে টাকা, স্বর্ণালংকার ও মালামাল লুটে নেয়।
ডাকাতরা চলে যাওয়ার পর পরিবারের সদস্যদের আর্তচিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তাদের উদ্ধার করে পুলিশকে খবর দেয়। রাত ৩টার দিকে ভৈরব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান খানের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেন।
ডা. আবু সাঈদ জানান, তিনি বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি ১৯৯৯-২০০২ এবং ২০০৬-০৯ দুই মেয়াদে ভৈরব উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে ভেটেরিনারি সার্জন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী শাহিন সুলতানা, দুই মেয়ে তাসফিয়া তাসনিম (৯), ফাওজিয়া (আড়াই মাস) ও গৃহকর্মী রহিমা বেগমকে নিয়ে এই ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন প্রায় পাঁচ বছর হলো। পাঁচতলা দুই ইউনিটের এই ভবনটির তৃতীয় তলার পশ্চিম পাশের ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি। আর পূর্বপাশে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকেন বাজিতপুর উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম। শহরের কমলপুর পশ্চিম এলাকার মো. রফিকুল ইসলাম জজ মিয়া ভবনটির মালিক। তবে তিনি এই ভবনে থাকেন না।
ডা. আবু সাঈদ আরো জানান, রাত ২টার দিকে মূল দরজার ছিটকিনি (হুক) ভেঙে পাঁচ-ছয়জনের একদল ডাকাত বাসায় প্রবেশ করে। শব্দ শুনে তিনি, তাঁর স্ত্রী ও গৃহকর্মীর ঘুম ভেঙে যায়। ডাকাতদের সবার হাতে দেশীয় বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র ছিল। একজনের মুখ বাঁধা থাকলেও বাকিদের খোলা ছিল। তবে তিনি কাউকে চিনতে পারেননি। তারা বাসায় প্রবেশ করে আলমারির চাবি চেয়ে নেয়। পরে পরিবারের সবার হাত-মুখ বেঁধে এক রুমে আটক করে অনেকটা ফ্রি-স্টাইলে ডাকাতি করে বের হয়ে যায়। পরে প্রতিবেশীরা এসে তাঁদের উদ্ধার করেন।
এদিকে ডাকাতির ঘটনার ডা. আবু সাঈদের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েশিশু তাসফিয়া তাসমিনের ভয় এখনো কাটেনি। সে বলে, ‘আমার হাত-মুখ বাঁধার সময় আমি খুব ভয় পাই।’
পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা বাজিতপুর উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সম্ভবত ডাকাতি শেষে ফেরার সময় আবার বাসায় নক করে ডাকাতদল। আমি দরজা না খুলে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা র্যাব বলে পরিচয় দেয়। তারপরও আমি দরজা না খুলে লোকাল থানার ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা না বলে দরজা খুলব না জানিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে ওরা চলে যায়। পরে আমি থানায় ফোন করে বিষয়টি জানাই।’
দ্বিতীয় তলার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট আবদুস ছাত্তার জানান, তিনি ওপরের বাসায় শব্দ শুনে পুলিশকে খবর দেওয়ার পাশাপাশি আশপাশের পরিচিতজনদের ফোন দেন। পুলিশ ও পরিচিতজনরা আসার আগেই ডাকাতদল চলে যায়।