ভারত খেলবে তাই ফতুল্লায় মাদ্রাসা বন্ধের আদেশ
বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট ম্যাচ উপলক্ষে স্টেডিয়ামের পাশের একটি মাদ্রাসা বন্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে স্টেডিয়ামে ভারতবিরোধী ব্যানার, ফেস্টুন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেট দলকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
একটি টেস্ট ও তিনটি ওয়ানডে খেলতে আগামী ৮ জুন ঢাকায় আসছে ভারতের ক্রিকেট দল। ১০ জুন থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় শুরু হবে প্রথম টেস্ট। চলবে ১৪ জুন পর্যন্ত। এই পাঁচদিন ফতুল্লা খানসাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের পাশের রওজাতুস সালিহীন আলিম মাদ্রাসা ও এতিমখানা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণাও করেছে। এর আগে কখনো কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ চলাকালে মাদ্রাসায় ছুটি দেওয়া হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি আজ শনিবার সংবাদ প্রকাশ করেছে।
রওজাতুস সালিহীন আলিম মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রধান মাওলানা আবদুস শাকুর বলেন, ‘জুনের ১০ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারতের টেস্ট ম্যাচ চলাকালে মাদ্রাসা ছুটি দিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি এসেছে। এই প্রথম আমরা খেলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে মাদ্রাসা বন্ধের অনুরোধ পেলাম।’
মাওলানা শাকুর বলেন, ‘গত বছর এশিয়া কাপের সময় প্রথম খেলার সময় মাদ্রাসায় ক্লাস বাতিল করা হয়। কিন্তু এবার প্রথম পাঁচদিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করতে বলা হলো। তবে মানবিক কারণে এতিমখানায় কেবল ২৫ জন এতিমকে রাখার জন্য মৌখিক অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’
ফতুল্লার খানসাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর ২০০৬ সালে প্রথম অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর সেখানে ২০১৪ সালে এশিয়া কাপের পাঁচটি ম্যাচসহ মোট ১০টি ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। তবে প্রথম টেস্টের পর নয় বছর পেরিয়ে গেলেও ফতুল্লায় আর কোনো টেস্ট ম্যাচ হয়নি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নিরাপত্তা-প্রধান মেজর (অব.) হোসেন ইমাম এএফপিকে বলেন, ভারতীয় ক্রিকেটারদের বাড়তি নিরাপত্তার অংশ হিসেবে মাদ্রাসাটি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজধানীতে সম্প্রতি দুই ব্লগার খুন হওয়ার ঘটনায় কিছু মাদ্রাসার ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর থেকে বাংলাদেশে মাদ্রাসার ছাত্রদের সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে।
ক্রিকেট বোর্ডের নিরাপত্তা-প্রধান আরো জানান, গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের কিছু ঘটনায় বাংলাদেশি ক্রীড়ামোদীদের মনে আঘাত লেগেছিল। বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচের পর সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়েছিল দুই দেশের। এরই পরিপ্রেক্ষিতেই নিরাপত্তাব্যবস্থায় কোথাও কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।
এসব পদক্ষেপ ছাড়াও ম্যাচ চলাকালে গ্যালারিতে ভারতবিরোধী ব্যানার ও ফেস্টুন নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে জানান হোসেন ইমাম। তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে অশ্লীল কার্টুন বা আক্রমণাত্মক ভাষায় লেখা ফেস্টুন, ব্যানার বহন করতে দেব না।’
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ড. মুহিদ উদ্দিন খন্দকার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তার খাতিরে টেস্ট চলাকালে মাদ্রাসা বন্ধ রাখার জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি। তারা পজিটিভ (ইতিবাচক) মনোভাব দেখিয়েছে।’
গত ২ জুন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন সভা করে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বলে জানান পুলিশ সুপার।
গত বিশ্বকাপে ভারত-বাংলাদেশ সেমিফাইনাল ম্যাচে আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশে বেশ বিতর্ক হয়েছে। ওই ম্যাচের একটি সিদ্ধান্তকে ঘিরে আইসিসি সভাপতির পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। আলোচিত ওই ম্যাচটির পর অনেকেই বাংলাদেশ-ভারতের ক্রিকেটীয় সম্পর্কের অবনতির আশঙ্কা করছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।