বিএনপিকে আগে কখনো এত দুর্বল দেখা যায়নি

বিশ্বের বড় মাপের একজন নেতার বাংলাদেশে যাওয়া একটি বিরল ঘটনা। তাই চলতি সপ্তাহে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিমান বহর বাংলাদেশের টারম্যাক ছুলে সার বেঁধে তাঁকে স্বাগত জানান মন্ত্রিসভার সদস্যরা। উপমহাদেশের সবচেয়ে বেশি সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হওয়ার পথে থাকা শেখ হাসিনাও ছিলেন সেখানে। সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের দেশের নেতার কাছ থেকে অনুমোদন পেতে উদগ্রীব ছিলেন তিনি। একই সঙ্গে ছিল আরেকভাবে ইতিহাস সৃষ্টিতে তাঁকে (মোদি) সহায়তা করা।
মোদি বাংলাদেশে এসেছিলেন একটি উপহার নিয়ে, দুই দেশের সীমান্তে ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা যা আয়তনে হংকং দ্বীপের প্রায় অর্ধেক। ৪১ বছর অপেক্ষার পর সীমান্তে অমীমাংসিত প্রায় ২০০ ছিটমহল নিয়ে সমাধানের সম্মত হয়েছে ভারত। বর্তমান সময় পর্যন্ত ছিটমহলের কারণে আঁকা বাঁকা দুই দেশের সীমান্ত। শতবছর পূর্বে দুই রাজার মধ্যে দাবা খেলা থেকে সৃষ্টি হয় এসব ছিটমহলের। তবে ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব অস্ট্রেলিয়ার গবেষক ব্রেনডেন হুইটের মতে, ব্রিটিশ শাসনের পূর্বে অষ্টাদশ শতাব্দীতে স্থানীয় সরকার ও মুঘলদের মধ্যে চুক্তির ফসল আজকের ছিটমহল।
ভারত ও বাংলাদেশর ছিটমহল বিষয়ে সমঝোতার কারণে সেখানে মানবেতর জীবনযাপনকারী মানুষের নাগরিক সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ছিটমহল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছিল। মোদির পূর্বসুরি মনমোহন সিং ২০১১ সালে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে এসে ছিটমহল বিষয়ে আলোচনা করেন। দেশের সীমানা নিয়ে কোনো চুক্তি হতে হলে তা পাস করতে সংবিধানের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। গত মাসে ভারতের পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধন এনে স্থল সীমান্ত চুক্তি পাস হয়। পাকিস্তান, চীন ও নেপালের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে এখনো ভারতের বিরোধ আছে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত বিষয়ে সবকিছুর অবসান ঘটেছে।
চলতি সপ্তাহে মোদির সফরে সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিরোধীদের বশমানা আচরণ। শেখ হাসিনার কঠিনতম প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ফুরিয়ে গেছে। সর্বশেষ নির্বাচনের বিরুদ্ধে দলটি চলতি বছরের শুরুতে চরমভাবে আন্দেলন করলেও ব্যর্থ হয়। এরপর থেকেই দলটি হালছাড়া। শেখ হাসিনার বজ্রমুষ্ঠি এখানে এক বড় ভূমিকা পালন করেছে। বিএনপির বেশির ভাগ নেতা নির্বাসনে অথবা কারাগারে। খালেদা জিয়ার মতো দুটোর কোনোটিতেই না থাকা নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। নির্বাচনে বিএনপির অন্যতম মিত্র জামায়াতে ইসলামী। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে দলটির অনেক নেতার যাবজ্জীবন অথবা ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। তবে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ মোদির সফরকে স্বাগত জানিয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির এখন চিন্তাশক্তি ফুরিয়ে গেছে, জনবল সংকটে পড়ছে। বিএনপিকে এর আগে কখনোই এতটা দুর্বল দেখা যায়নি।
খালেদা জিয়া সম্ভবত মোদিকে যা বলেছেন তা আগে থেকেই তিনি (মোদি) জানেন : বাংলাদেশকে অবশ্যই একটি পার্লামেন্ট ব্যবস্থায় আসতে হবে, যেখানে সব দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আস্থা পাবে। শেখ হাসিনার শাসন বৈধতা পায় ২০১৪ সালের নির্বাচনে যেখানে অনেক বিরোধী দলের নেতা ছিলেন কারাগারে এবং বেশির ভাগ নির্বাচনী আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। তবে বৈধতার ব্যাপারে সমর্থনের বিষয়টি হয়তো বহুদূরে চলে গেছে। ধারণার কেন্দ্রে থাকা বিষয়টি হলো ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্ধশতবার্ষিকী পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে উপযুক্ত ব্যক্তিদের তত্ত্বাবধানে শেখ হাসিনা প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবেন। এখানে উপযুক্ত ব্যক্তিদের অন্য কথায় বোঝানো হচ্ছে- তাঁর বাবা বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অনুগতদের।