সাংস্কৃতিক জোট নেতার ওপর হামলার বিচার দাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি বাসুদেব রায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে সংগঠনটি। হামলার জন্য তারা ছাত্রলীগকে দায়ী করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারের সময় বেঁধে দেয়।
আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করে সাংস্কৃতিক জোট। সমাবেশের আগে সকাল ১০টায় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালো ব্যাজ ধারণ করে প্রতিবাদ মিছিল করে সংগঠনটি। এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ শিক্ষকরা।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়াম মার্কেটের সামনে গণশিল্পী সংঘের কার্যালয়ের ভেতরে বাসুদেবকে পিটিয়ে পা ভেঙে দেয় দুর্বৃত্তরা। আহত বাসুদেব পাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী। বাসুদেব এখন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
অবস্থান কর্মসূচিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য দেবশ্রী মণ্ডল বলেন, “সকালে দাদাকে (বাসুদেব রায়) দেখতে গিয়েছিলাম। দাদা তখন বারবার বলল, ‘তখন যদি কেউ শাটারটা তুলে দিত তাহলে আমি দৌড়ে পালিয়ে বাঁচতে পারতাম। কিন্তু কেউ আমার চিৎকার শুনল না।’ এই পালানো শুধু দাদার মধ্যে সীমাবদ্ধ না। আমরাও প্রতিনিয়ত ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমরা এখন নিজের কার্যালয়ের ভিতরেও নিরাপদ নই।”
কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক কণিকা গোপ বলেন, ‘বাসুদেব রায়ের মতো একজন সাংগঠনিক কর্মীরা আজ যদি এ ধরনের হামলার শিকার হন তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা আজ কোথায়? এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হলো এই সাংস্কৃতিক কর্মীরা। আর একের পর এক এ রকম কর্মীদেরওপর হামলার যদি কোনো বিচার না হয় তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কোনো সাংস্কৃতিক চর্চা হবে না।’
ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ফারুক ইমন সমাবেশে বলেন, ‘ছাত্রলীগ আজকে বাসুদেবকে মেরেছে, কালকে আমাকে মরবে। তাদের হাত থেকে কারো রেহাই নেই। এ রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার না হওয়াই এর জন্য দায়ী।’ এ ঘটনার জন্য ছাত্রলীগকর্মী সজীবকে দায়ী করে তাঁকে আটকের দাবি জানান তিনি।
অবস্থান কর্মসূচিতে কণিকা গোপের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন গণশিল্পী সংস্থার সভাপতি আনোয়ার হোসেন, তীর্থক নাটকের সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মো. ইমরান হোসেন, সননের আহ্বায়ক একরামুল, রুডার সভাপতি সুব্রত, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ফারুক ইমন, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আয়াতুল্লাহ খোমেনী প্রমুখ। সমাবেশের ফাঁকে ফাঁকে প্রতিবাদী সংগীত পরিবেশনা করেন সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীরা।
প্রশাসন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ হামলার বিচার না করলে আগামীকাল ১২টায় পুনরায় কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছে সাংস্কৃতিক জোট। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেন সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীরা।
স্মারকলিপিতে এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ের সাংস্কৃতিক কর্মীর ওপর হামলার ঘটনাসহ এই হামলার প্রতিবাদে দুটি দাবি জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগকর্মী সজীব ও তাঁর সহযোগীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার ও তাঁদের ছাত্রত্ব বাতিল করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয় ওই স্মারকলিপিতে।
এদিকে বাসুদেবের ওপর হামলার প্রতিবাদে দুপুর ১টায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে রাবি প্রগতিশীল ছাত্রজোট।