ভাঙা হলো এমপির সেই দেয়াল, মুক্ত পরিবার

খুলনার পাইকগাছা পৌরসভায় প্রতিবেশীর বাড়ির প্রবেশ পথ অবরুদ্ধ করে সংসদ সদস্যের দেওয়া প্রাচীর এক বছর পর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘোষণার পর দুপুরে মেশিন দিয়ে পুরো দেয়ালটি গুঁড়িয়ে দেয় উপজেলা প্রশাসন।
এর আগে সকালে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফকরুল হাসান পুলিশ নিয়ে গিয়ে বাড়ির প্রবেশ পথের অংশের দেয়াল ভেঙে দেন। পরে দুই ঘণ্টা বিরতি দিয়ে পুরো দেয়াল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহমেদ বলেন, দুপুরে বিরতি দিয়ে পুনরায় কাজ শুরু করা হয়। মেশিন সংগ্রহ করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল।
এ ব্যাপারে দেয়াল নির্মাণ করা খুলনা-৬ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (এমপি) শেখ মো. নূরুল হক বলেন, ‘প্রাচীর ভেঙে পথ বের করার বিষয়টি শুনেছি। সেখানে বিকল্প একটি পথ রয়েছে। জনস্বার্থে আরো দুটি জায়গা থেকে পথ বের করলেও আমার কিছু বলার নেই।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাইকগাছা পৌর আওয়ামী লীগের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আজিজ গোলদারের পরিবার ৫০ বছর ধরে ওই ওয়ার্ডে বসবাস করছেন। সেখানে প্রায় ৫০ শতক জমি রয়েছে। আজিজদের প্রতিবেশী একই দলের এমপি অ্যাডভোকেট শেখ মো. নূরুল হক। আবদুল আজিজ গোলদারের দখলে থাকা জমি ওয়ারিশসূত্রে মালিক বলে দাবি করেন ঠাকুরদাস ও অজিত হালদার নামের দুজন। তাঁরা ওই জমি উদ্ধার করতে না পেরে এমপির ছেলে শেখ মনিরুল ইসলামকে জমির আমমোক্তারনামা দেন। এরপর দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি মামলা ও সংবাদ সম্মেলন করে জমি নিজেদের বলে দাবি করে। ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি ৫০ শতক সম্পত্তি দখল করে চারপাশে প্রাচীর নির্মাণ করেন এমপি। বাড়ির চারিদিকে প্রাচীর তুলে দেওয়ায় আবদুল আজিজের পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এরপর থেকে ওই পরিবারের সদস্যরা দেয়ালের নিচে মাটি খুঁড়ে পথ বের করে নিয়ে যাতায়াত করতে থাকে। এ ছাড়া তারা মই ব্যবহার করে উঁচু ওই দেয়াল পার হয়ে বাইরে যাতায়াত করত।
এদিকে, দেয়াল দিয়ে প্রতিবেশী এক পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে এমপি শেখ মো. নুরুল হককে তলব করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। আজ রাজধানীতে কেন্দ্রীয় ঈদগাহের সামনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অভিযানের সময় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ওই এমপিকে ঢাকায় পার্টি অফিসে তলব করেছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আমি ওই দেয়াল ভেঙে ফেলতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি, রাতেই বেশির ভাগ অংশ ভাঙা হয়েছে।’