জামালপুরে দরিদ্র ৪ শিশুর দায়িত্ব নিলেন ডিসি
ওরা চার ভাই-বোন। বাবা-মা থেকেও না থাকার মতো। মানুষের কাছে হাত পেতে নিজেদের খাবার নিজেদেরই জোগাড় করতে হতো। যা পেত ছোট্ট ভাই-বোনগুলো মিলেমিশে খেত।
সেই চার শিশু ও তাদের পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. শাহাবুদ্দিন খান। চার শিশুর তিনজনকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন তিনি। ঘর নির্মাণের জন্য দিয়েছেন দুই বান্ডেল ঢেউটিন, এক বস্তা চাল, ছয় হাজার টাকা ও শিশুদের জন্য পোশাক দিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর শহরের মুসলিমাবাদে একটি বাড়ির দেয়াল ঘেঁষে থাকে ওই শিশুরা। তাঁদের বাবার নাম তমির উদ্দিন। তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। সুস্থ বোধ করলে মাঝেমধ্যে রিকশা চালান। সেই টাকা দিয়ে সংসার চলে না। সন্তানদের খবরও নেন না। শিশুদের মা সেলিনা বেগম পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন। সন্তানদের ফেলে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান।
চার শিশুর মধ্যে সবার বড় সালাউদ্দিন। বয়স প্রায় ১১ বছর। এরপর স্বাধীন, মেঘলা ও ইকবাল। ইকবালের বয়স প্রায় চার বছর। তাদের আরো দুই ভাই ছিল। দুই বছর বয়সী সালেহীন নর্দমায় পড়ে ও তিন বছর বয়সী আজাহার অসুস্থ হয়ে মারা গেছে।
অভাবের তাড়নায় ছাপড়া ঘরের চালের টিনও বিক্রি করে দেন শিশুদের বাবা তমির উদ্দিন। এরপর পুরোটা শীত তাদের কেটেছে খোলা আকাশের নিচে। ক্ষুধার যন্ত্রণা নিয়ে অসহায় চার ভাই-বোন একে অপরকে জড়িয়ে সারা দিন শহরের এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়িয়েছে। দয়া করে কেউ একটু খাবার দিলে সেটাই চার ভাইবোন মিলে ভাগ করে খেত। অন্যথায় ডাস্টবিন থেকে কুড়ানো খাবারেই হতো তাদের ক্ষুধা নিবারণ।
সম্প্রতি স্থানীয় একটি গণমাধ্যমে ‘জামালপুরের চার শিশুর করুণ জীবনচিত্র’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ওই চার ভাই-বোনের অসহায়ত্বের চিত্র দেখে তাদের পুনর্বাসনে এগিয়ে আসেন জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান।
জেলা প্রশাসক গতকাল সোমবার বিকেলে মুসলিমাবাদ এলাকায় ওই শিশুদের ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে যান। কথা বলেন তাদের বাবা-মা ও তাদের সঙ্গে। এ সময় ঘর নির্মাণের জন্য তিনি দুই বান্ডেল ঢেউটিন, এক বস্তা চাল, ছয় হাজার টাকা ও শিশুদের জন্য পোশাক দেন।
জেলা প্রশাসক শাহাবুদ্দিন খান জানান, আজ মঙ্গলবার সকালে চার শিশুর মধ্যে বড় তিন ভাইবোনকে স্থানীয় মুসলিমাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছে। আর শিশু ইকবালের এখনো স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি। বয়স হলে তাকেও স্কুলে পাঠানো হবে।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, এই শিশুদের লেখাপড়াসহ পুনর্বাসনে স্থায়ী উদ্যোগ নেওয়া হবে; যাতে তারা ভালোভাবে লেখাপড়া করে বড় হতে পারে।