ছিল ২৬ কোটি টাকা, পুনর্মূল্যায়নে দাঁড়াল ১১ কোটি

পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য শরীয়তরপুর জাজিরা উপজেলার পশ্চিম নাওডোবা এলাকায় সেনানিবাস নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ওই জমিতে থাকা ঘরবাড়ি, স্থাপনা ও গাছের মূল্য নির্ধারণে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তা পুনরায় নির্ধারণ করা হয়।
বন বিভাগ থেকে পাঠানো গাছের নতুন মূল্য তালিকায় ১৫ কোটি ২৯ লাখ ৮৭ হাজার ২৫০ টাকা কম নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রথম যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেখানে মূল ছিল ২৬ কোটি ৪৮ লাখ আট হাজার ৩৫০ টাকা। পুনর্মূল্যায়নে গিয়ে দাঁড়ায় ১১ কোটি ১৮ লাখ ২১ হাজার ১০০ টাকা। মূল্যতালিকায় এত টাকার অসঙ্গতি কেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান।
জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে সার্বিক নিরাপত্তায় ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেডকে স্থায়ী সেনানিবাস নির্মাণ করতে ৯৯ দশমিক ৪৪ একর জমি অধিগ্রহণ করতে বলা হয়। গত বছরের ৫ মে এ-সংক্রান্ত চিঠিটি জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠায় সেনাবাহিনী।
এরপর জমি অধিগ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ১ জুন জমির মালিকদের নোটিশ দেওয়া হয়। এরপর জমির মালিক এবং ঘরবাড়ি, স্থাপনা ও গাছের তালিকা করা হয়। গত ২২ আগস্ট শরীয়তপুর গণপূর্ত বিভাগকে ঘরবাড়ি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের জন্য এবং গাছের মূল্য নির্ধারণের জন্য বন বিভাগকে ওই তালিকাটি দেওয়া হয়। এরপর তারা একটি তালিকা জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় জমা দেয়।
ওই সব স্থাপনা ও গাছপালার অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। পরে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে একটি চিঠি দেন। সেখানে সরেজমিন পুনর্তদন্ত ও যাচাই করে বাস্তবভিত্তিক বাজার মূল্য নির্ধারণের অনুরোধ করা হয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গণপূর্ত বিভাগ একটি তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেয়। আর বন বিভাগ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে পুনরায় মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
প্রথমবার গাছের মূল্য নির্ধারণ করেছেন শরীয়তপুর সামাজিক বন ও নার্সারি কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুধীর কুমার রায় দেব সিংহ। তিনি ওই স্থানে থাকা গাছের মূল্য নির্ধারণ করেন ১৭ কোটি ৬৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯০০ টাকা। সরকার এর সঙ্গে আরো ৫০ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে মূল্য নির্ধারণ করা হয় ২৬ কোটি ৪৮ লাখ আট হাজার ৩৫০ টাকা। নতুন তদন্ত কমিটি বর্তমানে ওই গাছের মূল্য নির্ধারণ করে সাত কোটি ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪০০ টাকা। এর সঙ্গে ৫০ শতাংশ বাড়তি যোগ হয়ে মূল্য দাঁড়াবে ১১ কোটি ১৮ লাখ ২১ হাজার ১০০ টাকা। এ হিসেবে নতুন তদন্তে সেনানিবাসের জন্য অধিগ্রহণ করা জায়গার গাছের মূল্য কমে ১৫ কোটি ২৯ লাখ ৮৭ হাজার ২৫০ টাকা।
এ বিষয়ে সামাজিক বন বিভাগ ফরিদপুর অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এনামুল হক ভূঁইয়া বলেন, জেলা প্রশাসকের চিঠি পেয়ে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি পুনরায় গাছের মূল্য নির্ধারণ করেন। আগের মূল্য ও পরের করা মূল্য তালিকায় যে অনিয়ম হয়েছে তা তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, বাড়তি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় একটি চক্র অধিগ্রহণ কার জায়গায় ঘরবাড়ি তুলেছে। বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে, গাছ লাগিয়েছে। ওই স্থাপনা ও গাছের বেশি মূল্য ধরা হয়েছে- এমন অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি তদন্ত করতে বন বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। গাছের নতুন মূল্য তালিকায় ১৫ কোটি টাকার বেশি অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। কেন এমন হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।