মায়েদের সামনেই দুই ছাত্রকে চড়-থাপড় দিলেন শিক্ষক!

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় ক্লাসে অনুপস্থিত থাকায় এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রকে মারধর করে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। গত ৮ এপ্রিল উপজেলার দিনারাহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
আহত দুই ছাত্রের নাম মুশফিকুর রহমান শান্ত ও ইমরান হোসেন। তারা দুজনই ওই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের নাম মতিউর রহমান। ওই দুই ছাত্রকে নড়িয়া উপজেলা স্থাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ওই দুই ছাত্রের পরিবার সূত্রে জানা যায়, শান্ত জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কয়েকদিন স্কুলে যেতে পারেনি। এ ছাড়া শান্তর আরেক সহপাঠী ইমরান হোসেন তার পঙ্গু বাবাকে নিয়ে মায়ের সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যায়। এ কারণে ওইদিন সেও ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারেনি।
এরপর গত শনিবার শান্ত ও ইমরান তাদের মায়েদের নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমানের কাছে যান। শান্ত অসুস্থ ছিল জানিয়ে ছেলেকে না মারার অনুরোধ করেন মা। সেই সঙ্গে ইমরানের মাও প্রধান শিক্ষককে ছেলেদের না মারতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারপরও মায়েদের সামনেই ওই দুই ছাত্রকে চড়-থাপড় মারেন শিক্ষক মতিউর রহমান। একপর্যায়ে শান্ত ও ইমরান ওই শিক্ষকের পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের দুজনকে মারধর করেন ওই শিক্ষক। এরপর তাদের দুজনকে ক্লাস থেকে বের করে দেন তিনি। পরে আহত অবস্থায় ওই দুই শিশুকে শনিবার রাতে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
আজ মঙ্গলবার সরেজমিন দিনারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, পড়া না পারলেই স্যার বেত দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পেটান।
শান্তর মা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘কয়েকদিন আগে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আমার ছেলে বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি। বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ই শিক্ষক মারধর করতেন। মার খাওয়ার ভয়ে ছেলেটি আমাকে নিয়ে বিদ্যালয়ে গিয়েছিল। আমি স্যারকে অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারপরও স্যার আমার সামনেই ছেলেটাকে মেরেছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘এখন ছেলের মাথায় অনেক যন্ত্রণা হচ্ছে। আমি এখন ছেলেটাকে নিয়ে কোথায় যাব ভেবে পাচ্ছি না।’
এ বিষয়ে জানতে বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমানকে পাওয়া যায়নি। সহকারী শিক্ষকরা জানিয়েছেন তিনি ছুটিতে রয়েছেন। মুঠোফোনে মতিউর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ওই দুই ছাত্র স্কুলে আসে না। আমি তাদের অনেক মারি নাই। হালকা-পাতলা চড়-থাপড় দিয়েছিলাম। স্থানীয়রা বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছে।’
নড়িয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শিশু শিক্ষার্থীদের মারধর করা যাবে না। কোনো শিক্ষার্থীকে মেরে থাকলে তা ঠিক করেনি। বিষয়টি আমাদের জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।