অবৈধ গ্যাস সংযোগ: ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর হামলা

নরসিংদীতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে আবারও হামলার শিকার হয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের সদস্যরা। ‘সরকার’ নামধারী একটি দালালচক্র এই হামলার পেছনে রয়েছে বলে দাবি করেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আজ বুধবার নরসিংদীর সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের সোনাতলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে যায় কর্তৃপক্ষ। এ সময় কিছু দুর্বৃত্ত ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এতে ১৫ পুলিশ সদস্য আহত হন।
পরে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দফায় দফায় তিন ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ চলে। ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করা হয়েছে। ওই এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। এর আগে দুই দফায় সোনাতলা এলাকায় এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু দুই দিন পরই তা আবার সংযোগ দেওয়া হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম এনটিভি অনলাইনকে জানান, দুপুরে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্টেটের নেতৃত্বে প্রায় ১৫-১৬ জন পুলিশ সদস্য অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে যায়। এ সময় কতিপয় সন্ত্রাসী ও গ্রামবাসী অতর্কিতে তাঁদের ওপর হামলা চালায়। ইটপাটকেলের আঘাতে প্রায় সব পুলিশ সদস্যই আহত হন।
‘খবর পেয়ে দুই প্লাটুন পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি। অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। পুলিশ সুপার আমেনা বেগম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শতাধিক ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
তিতাস গ্যাস অ্যান্ড ট্রান্সমিশন কোম্পানি নরসিংদী বিক্রয় কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেন,‘রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নরসিংদীতে প্রায় সব কয়টি উপজেলায়ই কয়েকটি চিহ্নিত দালাল চক্র এলাকাবাসীকে ভুল বুঝিয়ে গ্যাস সংযোগ নিতে বাধ্য করছে। বিনিময়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি।’
‘ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে আমরা এ সব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। তবে সরকারদলীয় নেতাদের নাম ভাঙিয়ে এসব চোরাইচক্র পুনরায় সংযোগ স্থাপন করছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩০টির মতো মামলা হয়েছে। তবে পুলিশ উদ্যোগী হয়ে গ্রেপ্তার করে সাজা নিশ্চিত করলে এবং সামাজিকভাবে প্রতিহত করতে পারলে গ্যাসের মতো সীমিত রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি বন্ধ হবে। অন্যথায় ২০৩১ সালের আগেই দেশে শিল্প-কারখানা চরম গ্যাস সংকটের সম্মুখীন হতে হবে।’ বলেন ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম।
পুলিশ জানায়, এর আগে গত ১৬ জুন ও ২ জুলাই সোনাতলা গ্রামের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ২ জুলাই গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সময় সোলেমান নামের এক ব্যক্তি ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। তারপরও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
কিন্তু দুই দিন পরই ৫ জুলাই গভীর রাতে আবারও অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ৬ জুলাই সাতজনের নাম উল্লেখ করে সদর মডেল থানায় একটি মামলা করে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। মামলার আসামিরা হলেন সোনাতলা গ্রামের সোলেমান, কাদের মিয়া, আলফাজ, বুলবুল, শামসুল হক গাজী, আলতাফ গাজী ও বিল্লালসহ আরো অজ্ঞাত দুইশ ব্যক্তি। এ পর্যন্ত পুলিশ একজনকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এর আগে পলাশ উপজেলার বাটপাড়া এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট, তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা গ্যাস চোরাই চক্রের সদস্যদের হাতে লাঞ্ছিত হন। এ ঘটনায় সাংবাদিক ও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ তিনটি মামলা দায়ের করে।