দুই জোয়ারে জলাবদ্ধতা, উঁচু এলাকায় ছুটছে মানুষ

চট্টগ্রামের জোয়ারে পানি জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। দৈনিক দুবার করে জোয়ারের পানি ঢুকছে শহরে। এর থেকে কেউ রক্ষা পাচ্ছে না। টানা বৃষ্টি যেমন দুর্ভোগের কারণ, তেমনি প্রখর রোদে জোয়ারের পানিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে নগরীর বেশির ভাগ সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এ দুর্ভোগে নগরীর কয়েকটি আবাসিক এলাকা এরই মধ্যে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ছে। আর উঁচু এলাকার দিকে ছুটছে নিচু এলাকার লোকজন।
আজ বুধবারও নগরীর অধিকাংশ এলাকা জোয়ারে ডুবে গেছে। আগ্রাবাদ সিডিএ, শান্তিবাগ, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, বাকলিয়া ও আগ্রাবাদ মা-শিশু হাসপাতালের নিচের তলা, বহির্বিভাগ নিয়মিত প্লাবিত হয়েছে।
হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শামসুন নাহার বিনতে আবদুল মান্নান জানান, জোয়ারের পানিতে হাসপাতালের নিচতলায় কাজ করা যাচ্ছে না। এখানে রোগীদের অধিকাংশ মা ও শিশু। তাদের কষ্ট হচ্ছে বেশি। চিকিৎসকরা কাজ করতে পারছেন না। রোগীরা বসতে পারছেন না। প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে হাসপাতাল কর্দমাক্ত হয়ে যাচ্ছে। পুরো হাসপাতাল পরিষ্কার রাখা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
অনেক সময় হাঁটু থেকে কোমর পানিতে হাসপাতালে আসতে হচ্ছে। এসেও কাজ করা যাচ্ছে না। সিডিএ এলাকার ব্যবসায়ী মো. আবদুর রহিম জানান, এ এলাকায় সারা দিন জোয়ারের পানি থাকে। জোয়ার এলে তাঁরা পাঁচ ফুট পানির নিচে থাকেন। আর জোয়ার যেতে যেতে সারা দিন লেগে যায়। মঙ্গলবার রাতে জোয়ার হয়েছে, সে পানি এখনো যায়নি। আবার আজ দুপুর থেকে জোয়ার শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, মাঝেমাঝে রাস্তা উঁচু করেই দায়িত্ব শেষ।
স্থানীয় হাতেখড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমেনা বেগম বলেন, জোয়ারের কারণে যাওয়া আসার ভাড়া বেড়ে গেছে। অনেক সময় তিনগুণ বেশি ভাড়া নেওয়া হয়। রাস্তাগুলোর অবস্থা করুণ। ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হয় শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া জোয়ারের কারণে ছাত্রদের লেখাপড়ার ব্যাহত হচ্ছে। জোয়ার আসার আগে স্কুল ছুটি দিয়ে দিতে হচ্ছে। নিচতলায় পানির কারণে ক্লাস নেওয়া যায় না।
সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী লেয়াকত আলী হাওলাদার জানান, এখন জোয়ার-ভাটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়, এটি বসবাসের একটি অযোগ্য স্থানে পরিণত হয়েছে। আবাসিক এলাকার প্রতিটি ভবনের নিচতলায় পানি। এখন রোদের ঝলমলে আলোতে জোয়ারে ভাসছে পুরো এলাকাটি।
আজ বুধবার দুপুর ২টায় সিডিএ এক নম্বর সড়কে গিয়ে দেখা যায়, হাতেখড়ি স্কুলের সামনে কোমর সমান পানি। এর বিপরীতে কর অঞ্চল-৪-এর কার্যালয়। কার্যালয়ের নিচে গাড়ি পাকিং-এ সদ্য কেনা নৌকাটি বেঁধে রাখা হয়েছে। আফিস শেষে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেটি দিয়ে আসা-যাওয়া করছেন।
নগর পরিকল্পনাবিধ ইঞ্জিনিয়ার আলী আশরাফ জানান, পুরো নগরী এখন জলাতঙ্কে পরিণত হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের আবাসিক এলাকাগুলো এখন পরিত্যক্ত হয়ে যাচ্ছে। মানুষ ছুটছে উঁচু এলাকার দিকে। এটি একটি শহরের জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করছেন তাঁরা।
জোয়ারের পানি থেকে রেহাই পেতে বন্দর এলাকায় স্থানীয়দের দাবির মুখে মহেষখালের বাধ অপসারণ করা হলেও এখন দিনে দুবার জোয়ারের পানিতে ডুবছে নগরীর বৃহৎ এলাকার মানুষ। একইভাবে জোয়ারের কারণে ক্ষতির মুখে পড়ে দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুন গঞ্জের ব্যবসায়ীরা। আর সরকারি সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় না হলে এ দুর্ভোগ থেকে সহজে মুক্তি মিলবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।