ফরিদপুরে বেহাল সড়ক দিয়ে বাড়িযাত্রা

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাতায়াতের অন্যতম পথ ফরিদপুর। ভোর থেকে রাত অবধি ফরিদপুরের মহাসড়কে যান চলাচলের অন্ত নেই। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি কয়েকদিনের টানা বর্ষণে ওই খানাখন্দ আরো বেড়েছে। বেহাল সড়ক দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের।
এ ছাড়া ফরিদপুর শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা সদরের রাস্তাঘাটগুলোও গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব অঞ্চলের যাত্রীদের তাই যাতায়াত করতে হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার অংশও অসংখ্য খানাখন্দে ভরা। সদর উপজেলার মুন্সীর বাজার পার হওয়ার শুরু হয় ছোট-বড় গর্ত। বিশেষ করে মহিলা রোড, শংকরপাশা, তালমার মোড়, বাসাগাড়ি হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনগুলোকে চলাচলে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
এ ছাড়া বাসাগাড়ি এলাকায় মহাসড়কের একটি বিরাট অংশ একপাশে দেবে গিয়ে রাস্তা অসমতল হয়ে গেছে। তবু ঝুঁকি নিয়েই বাস-ট্রাক ও অন্যান্য পরিবহন চলাচল করছে। কিছু কিছু জায়গায় বালু ও খোয়া দিয়ে রাস্তা মেরামতের ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। একই অবস্থা ফরিদপুর-খুলনা পথের ফরিদপুর থেকে কামারখালী পর্যন্ত মহাসড়কেরও।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর অংশের ৪৯ কিলোমিটারের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সদর উপজেলার রাজবাড়ী রাস্তার মোড় পার হতেই দেখা গেল মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য গর্ত ও খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে এ পথের ব্যস্ততম কানাইপুর বাজার, মাঝকান্দি, মধুখালীসহ বিভিন্ন স্থানেই মহাসড়কের এ দুরবস্থা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক এন সেভেন নামে পরিচিত। এই সড়কের ফরিদপুর অংশের অধিকাংশ জায়গায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে বৃষ্টি মৌসুমের শুরুতেই। কয়েকটি স্থানে গত মে মাসে স্থানীয় সড়ক বিভাগ সিলকোডের কাজ শেষ করলেও পাথরকুচি আর বিটুমিনের কোনো প্রলেপ পড়েনি সেখানে।
স্থানীয় জনগণ, গাড়িচালক ও যাত্রীদের অভিযোগ, সড়ক বিভাগের দায়িত্বহীনতা ও লোকদেখানো কাজের ফল পায় না সাধারণ মানুষ। এই দুর্ভোগ কবে লাঘব হবে সে বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত সবাই।
সোহাগ পরিবহনের চালক হালিম মিয়া বলেন, খানাখন্দের কারণে প্রতিদিন এই মহাসড়কে চলাচল করতে গিয়ে হাজার হাজার যানবাহন চরম অসুবিধায় পড়ছে। এতে এসব গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে এবং দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। তিনি বলেন, দ্রুত সড়কের মেরামতের কাজ না করলে ভারী গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।
এই সড়কে গত এক সপ্তাহে কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মোল্লা। তিনি জানান, ফরিদপুর থেকে মধুখালীর বাগাট পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে কয়েক হাজার গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তগুলো মেরামত করা না হলে দুর্ঘটনা বাড়তেই থাকবে।
অবশ্য রোজার শুরু থেকেই সড়ক বিভাগ জরুরিভাবে মহাসড়কের এসব ক্ষতিগ্রস্ত অংশে মেরামতকাজ সম্পন্ন করার কথা বললেও তা হয়নি। এসব বিষয়ে জানতে সড়ক ও জনপথের কার্যালয়ে গিয়েও নির্বাহী প্রকৌশলীকে পাওয়া যায়নি।
তবে সংশ্লিষ্ট মহাসড়কে মেরামতকাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফরিদপুর সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মহিবুল্লাহ সুমন বলেন, ‘ঈদে ঘরমুখো মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে আমরা চারটি গ্রুপে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। মাঝেমধ্যে বৃষ্টির কারণে সংস্কারকাজ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’