রাজন হত্যার বিচারে সরকার সব করবে : প্রতিমন্ত্রী
মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী বলেছেন, রাজন হত্যা মামলার বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনালসহ যা যা করা দরকার সবকিছু করবে সরকার।
আজ বুধবার দুপুর ২টার দিকে সিলেটে শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনের গ্রামের বাড়ি পরিদর্শনে গিয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী এ আশ্বাস দেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী রাজনের পরিবারকে এক লাখ টাকার অনুদান প্রদানসহ সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কান্না যেন থামছেন শিশু রাজনের মা-বাবার। যে যখন তাঁদের দেখতে যাচ্ছেন, তাঁদের বুকে আঁকড়ে পড়ে ছেলে হারানোর আর্তনাদই করছেন তাঁরা। প্রতিমন্ত্রী রাজনের বাড়িতে পৌঁছালে রাজনের মা লুবনা বেগম তাঁকে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। এ সময় রাজনের বাবা শেখ আজিজ আলম ছেলে হত্যার বিচারের জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। প্রতিমন্ত্রী সেখানে কিছু সময় ধরে রাজনের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের সমবেদনা জানান।
পরে প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কখনোই খুনের রাজনীতি করি নাই। আমরা এই খুনকে বরদাশত করি না। যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে, এতে আমরা শুধু মর্মাহতই নই, আমরা শঙ্কিতও। যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। এ বিচার যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, তাতে বিশেষ ট্রাইব্যুনালসহ সবকিছু করবে সরকার। বিষয়টি আমাদের মন্ত্রণালয় নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে।’
এর আগে সিলেটের সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য কেয়া চৌধুরী রাজনের বাড়িতে যান। তিনি রাজনের বাবা-মাকে সান্ত্বনা দেন। পরে তিনি সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, তিনি নিজ বরাদ্দ থেকে রাজন হত্যার স্থানে ‘শিশু নির্যাতনবিরোধী রাজন স্তম্ভ’ তৈরি করে দেবেন। যা হবে দেশের শিশু নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের কেন্দ্রস্থল।
গত ৮ জুলাই সকালে সিলেট শহরতলির কুমারগাঁওয়ে চোর সন্দেহে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় শিশু রাজনকে। হত্যাকাণ্ডের ভিডিওচিত্রও ধারণ করা হয়। এ ভিডিও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়।
এ ঘটনায় মুহিত, কামরুল, আলী হায়দার ও স্থানীয় চৌকিদার ময়না মিয়া লালসহ কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়।
রাজনের লাশ গুম করার সময় স্থানীয় লোকজন হাতেনাতে আটক করে মামলার আসামি মুহিত আলমকে। পরে মুহিতকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তাঁকে পাঁচদিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। মুহিতের স্ত্রী লিপি বেগমকেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। কিন্তু হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততা না থাকায় পরে পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দেয়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের জালালাবাদ থানা এলাকার লামাকাজি মীরেরগাঁও থেকে গত সোমবার ভোরে ইসমাইল হোসেন আবলুছকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইসমাইল শিশু রাজন হত্যার প্রধান আসামি মুহিত আলমের আত্মীয়।
ওই দিন বিকেলে মামলার অন্যতম আসামি কামরুলকে সৌদি আরবের জেদ্দায় আটক করা হয়। তিনি ঘটনার পরপর পালিয়ে সৌদি আরবে চলে যান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। কামরুল এখন জেদ্দা পুলিশের হাতে রয়েছেন। তাঁকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক।
এ ছাড়া গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে সিলেট শহরতলির টুকেরবাজার এলাকা থেকে স্থানীয় চৌকিদার ময়না মিয়া লালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আজ বুধবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
এদিকে বুধবার দুপুরে শহরতলির শেখপাড়া থেকে এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় এ মামলার আরেক আসামি দুলালকে গ্রেপ্তার করা হয়।