সাতক্ষীরায় দেশের বৃহত্তম ইফতারের আয়োজন!

সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা আহছানিয়া মিশনে এবার প্রতি রমজানে একসঙ্গে প্রায় আট হাজার রোজাদার মুসল্লি ইফতারি করেছেন। এতে অংশ নিতে সাতক্ষীরা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্মপ্রাণ রোজাদার মুসল্লিরা এসেছিলেন।
দেশের সবচেয়ে বড় ইফতারির আয়োজন এটাই বলে দাবি করেছে নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশন কর্তৃপক্ষ।urgentPhoto
মিশন কর্তৃপক্ষ জানায়, উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ পীর হজরত খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ (রহ.) ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নলতা আহছানিয়া মিশন। তখন থেকেই বহুমুখী সেবামূলক কার্যক্রমের মধ্যে প্রতি রোজায় ইফতারির আয়োজন মিশনের অন্যতম সেবা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে আহছানিয়া মিশনের সেবামূলক কার্যক্রম ছড়িয়ে রয়েছে। পীরের ইন্তেকালের পর পীর মাজার শরিফের খাদেম আলহাজ্ব আনসারউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে মিশন কমিটি এই ইফতারির আয়োজন করে থাকে। এর ব্যয়ভার বহন করেন পীরের মুরিদানরা। ১৯৬৫ সাল থেকে এর কলেবর বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে আট হাজারে পৌঁছেছে।
রাজশাহী থেকে সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মো. শাহজাহান এবারও এসেছেন নলতায় পবিত্র রমজান মাস কাটাতে। এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘১৭ বছর ধরে এখানে আসছি। রোজার সবগুলো দিন আমি এখানে কাটাই। আমার ও পরিবারের জন্য যা কিছু চেয়ে মোনাজাত করি আমি তা পাই। এই বিশ্বাস থেকেই আমি আহছানিয়া মিশনে আগামী দিনগুলোতেও আসতে চাই।’
ঢাকার ব্যবসায়ী আহমেদ ফরিদ বলেন, পীরসাহেবের দোয়ায় তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্যে সব আয় উন্নতি হয়েছে। এ জন্য প্রতি রোজার সময় তিনি এখানে এসে রেস্টহাউসে থাকেন। নামাজ, রোজা আদায় করেন।
নলতা গ্রামের মুরিদ আলী বলেন, ‘এখন আমার বয়স ৫৫ বছর। ২০ বছর ধরে প্রাণের টানে এই মিশনেই ইফতার করি। এখানকার মতো শান্তি আর কোথাও পাই না। অগাধ বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা নিয়ে আমি কেন, শত শত মুসলমান এখানে আসেন ইফতার করতে। নলতা শরিফে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব রোজাদারের জন্য ইফতার উন্মুক্ত।’
পীরের রওজার সামনে বিশাল প্যান্ডেলে আয়োজন করা হয় এই ইফতারির। সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হজরত খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ (রহ.)-এর অনুসারীরা মিশনে অন্তত একদিন হলেও ইফতার করতে আসেন।
মিশন কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘স্রষ্টার ইবাদত আর সৃষ্টির সেবা’ এই নীতি ধারণ করে পবিত্র রমজান মাসের সব রোজায় নিয়মিতভাবে ইফতারি তৈরি ও তা রোজদারদের মধ্যে পরিবেশন করা হয় এই মিশনে। ইফতারিতে মিশনের ব্যবস্থাপনায় তৈরি ছোলা,শিঙ্গাড়া, চপ, কলা, ফিরনি, চিঁড়া ভিজা ও মুড়ি পরিবেশন করা হয়। প্রতিদিন ২৫ মণ কলা, ১৩ মণ দুধ, ১৭৫ কেজি ছোলা, ১২ মণ আলু, ২০০ কেজি চিঁড়া ও ১০০ কেজি সুজিসহ অন্যান্য উপকরণ দিয়ে পীরের মুরিদরাই প্রস্তুত করেন ইফতারি।
নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের যুগ্ম সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, শুধু স্রষ্টার ইবাদত নয়, সঙ্গে সৃষ্টির সেবাও করতে হবে। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে ৫২ বছর ধরে এখানে ইফতারির আয়োজন চলছে। দিন দিন এই ইফতারির কলেবর আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি রোজায় আট হাজারেরও বেশি লোক এখানে ইফতার করেন। জেলার বহু মসজিদেও মিশন থেকে নিয়মিতভাবে ইফতারি সরবরাহ করা হয়েছে।
রমজানের সব কটি দিন নলতা শরিফে কাটাতে দেশের অনেক জেলা থেকে রোজাদাররা এখানে গেস্টহাউসে অবস্থান নিয়ে ইফতারিতে শরিক হন বলে জানান আমজাদ হোসেন।
মিশনের সহসভাপতি মাওলানা সাঈদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে নলতা মিশনের ইফতারির আয়োজনই সবচেয়ে বড়। মাসব্যাপী এত বড় আয়োজন দেশের আর কোথাও নেই বলেও জানান তিনি। এই আয়োজন কমবে না বরং তা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।