তরুণের চোখ ‘উপড়ে ফেলা’য় মামলা, ওসিসহ আসামি ১৩

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহজালালের (২৮) দুটি চোখ উপড়ে ফেলার অভিযোগে খুলনার খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম খানসহ ১৩ জনের নামে মামলা করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে (সিএমএম) এ মামলা করেন শাহজালালের মা মোছা. রেনু বেগম। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
বাদীর পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করছেন আইনজীবী ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম।
মামলার আসামিরা হলেন খালিশপুর থানার ওসি নাসিম খান, উপপরিদর্শক (এসআই) রাসেল, এসআই তাপস রায়, এসআই সেলিম মোল্লা, এসআই মিজান, এসআই মামুন, এসআই নুরুল ইসলাম, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সৈয়দ আলী, আনসার সিপাই আফসার আলী, আনসার ন্যান্সনায়েক আবুল হোসেন, আনসার নায়েক রেজাউল, পুলিশ সোর্স সুমা আক্তার ও রাসেল।
শাহজালাল পিরোজপুর জেলায় কাঁচামালের ব্যবসা করলেও তাঁর বাবা জাকির হোসেন ও মা রেনু বেগম থাকেন খুলনার খালিশপুরে। শাহজালাল বিয়ে করেছেন খালিশপুরের গোয়ালখালীতে।
মামলার নথির বরাত দিয়ে অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম জানান, গত ১৮ জুলাই স্ত্রী ও শিশুমেয়েকে নিয়ে খুলনার খালিশপুরের গোয়ালখালীতে শ্বশুড়বাড়িতে যান শাহজালাল। ওই দিন রাতে শিশুর দুধ কিনতে তিনি পাশের দোকানে যান। তখন পুলিশের সোর্স সুমা আক্তার ও রাসেল তাঁকে কৌশলে খালিশপুর থানায় নিয়ে যান। খবর পেয়ে তাঁর বাবা ও মা থানায় গেলে ওসি নাসিম খান দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। তাঁরা সেই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। মোমিনুল ইসলাম আরো জানান, শাহজালালের বাবা-মা ছেলেকে উদ্ধারের জন্য খালিশপুর থানার সামনে অবস্থান করছিলেন। তাঁরা থানার সামনে বসে থাকা অবস্থায় ভোর রাতের দিকে পুলিশভ্যানে শাহজালালকে নিয়ে বাইরে যায় পুলিশ। সকালে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ছিনতাই করতে গিয়ে শাহজালালের দুটি চোখ উঠিয়ে ফেলেছে বিক্ষুব্ধরা। পরে শাহজালালের নামে ছিনতাই মামলা দেওয়া হয়। পরে আদালতের নির্দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য শাহজালালকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ঢামেকে চিকিৎসাধীন শাহজালালের দুটি চোখ চিরতরে অন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাঁর চোখে পচন ধরায় দুটি চোখই উঠিয়ে ফেলা হয়েছে।
শাহজালালের মা রেনু বেগমের ভাষ্য, তাঁরা খালিশপুর থানায় গিয়ে শাহজালালের সঙ্গে দেখা করার সময় তিনি সুস্থ ছিলেন। থানার সামনে বসে থাকা অবস্থায় তাঁদের সামনে দিয়ে শাহজালালকে সুস্থ অবস্থায় পুলিশ ভ্যানে করে নিয়ে গিয়ে যায়। পরে ছিনতাই নাটক সাজানো হয়েছে।
মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়, আসামিরা নিজেরা বাঁচতে একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শাহজালালকে আদালতে পাঠান। পরে সব মামলায় জামিন নিয়ে আজ মামলা করেন তাঁর মা।
এর আগে খালিশপুর থানার ওসি নাসিম খান বলেন, ছিনতাই করার সময় স্থানীয় লোকজন শাহজালালকে আটক করে পিটুনি দেয়। এ সময় তাঁর চোখ দুটি উপড়ে যায়।