শরবত খাওয়ানোর পর পিটিয়ে-শ্বাসরোধে স্বামীকে হত্যা!

স্বামীকে হত্যার পর নিজেদের শোবার ঘরের মেঝেতে পুঁতে রেখেছিলেন এক নারী। এরপর প্রায় দুই বছর বয়সী সন্তান নিয়ে তিনদিন পাশের ঘরে বাস করছিলেন তিনি। তিনদিন পর দুর্গন্ধ বের হলে এই ঘটনা জানাজানি হয়। আর তখনই পুলিশের কাছে স্বামী হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন ওই নারী।
নিহত ব্যক্তির নাম জাকির হোসেন বিপু (৪০)। আর তাঁকে হত্যার কথা স্বীকার করা স্ত্রীর নাম বানু আকতার।
গত বুধবার বগুড়ার গাবতলী উপজেলার নাড়ুয়ামালা ইউনিয়নের বাহাদুরপুর উত্তরপাড়া গ্রামে এই হত্যার ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, বগুড়া শহরের খান্দার বিলপাড়া এলাকার মৃত শাজাহান আলীর ছেলে জাকির হোসেন বিপুর সঙ্গে নয় বছর আগে পরিচয় হয় বাহাদুরপুর গ্রামের মৃত শমশের আলীর মেয়ে বানু আকতারের। এরপর প্রেম ও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তাঁরা। এই দম্পতির আট বছর ও ২৩ মাস বয়সী দুটি সন্তান রয়েছে।
হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বানু আকতার পুলিশকে জানান, স্বামী জাকির রংমিস্ত্রির কাজের পাশাপাশি, ইয়াবা ব্যবসা, ছিনতাই ও জিনের বাদশাহ সেজে মোবাইলের মাধ্যমে প্রতারণা করে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন। বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন কারণে তাঁদের দুজনের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত। মাঝেমধ্যে অমানবিক নির্যাতন করতেন জাকির। এসব সহ্য করতে না পেরে তাঁদের সংসার ভেঙে যাওয়ারও উপক্রম হয়।
বুধবার রাতের খাবার শেষে নেশাগ্রস্ত জাকির ঘুমিয়ে পড়েন। বানু আকতার ইসবগুলের শরবতের সঙ্গে পাঁচ-ছয়টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে জাকিরকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন এবং ওই শরবত পান করান। জাকিরের আগে থেকেই ঘুমের ওষুধ ও ইসবগুলের শরবত খাওয়ার অভ্যাস ছিল। রাত ১টায় ঘুমে অচেতন স্বামী জাকিরকে বানু আকতার লোহার পাইপ দিয়ে নাক, মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পেটান। এরপরও যখন জাকির জীবিত ছিলেন, তখন গামছা দিয়ে তাঁর গলায় ফাঁস লাগিয়ে নাক-মুখ চেপে ধরে হত্যা নিশ্চিত করেন বলে পুলিশকে জানান বানু।
এরপর বিছানা থেকে লাশ টেনে নামিয়ে খাটের নিচে মেঝেতে গর্ত করে পুঁতে রাখেন তিনি। এরপর মাটির প্রলেপ দিয়ে ঘরের মেঝে স্বাভাবিক করে ঘরটি তালাবদ্ধ করে রাখেন। পরে আট বছর বয়সী মেয়েকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেন বানু আকতার। ছোট সন্তানসহ পাশের ঘরেই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকেন তিনি। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই ঘর থেকে পচা দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করলে বানু আকতার নিজেই গ্রামের লোকজনকে খবর দেন।
পরে স্থানীয়রা বিষয়টি থানায় জানালে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল বাসার, উপপরিদর্শক আহসান, সুজা মিয়া ও আজিজুর রহমানসহ অন্যরা গ্রাম পুলিশ হায়দারের সহায়তায় ওই ঘরের মেঝের মাটি সরিয়ে জাকিরের লাশ উদ্ধার করেন।
এরই মধ্যে বানু আকতারকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। রাত ১১টায় লাশ থানায় আনা পর্যন্তও বানু আকতার স্বীকার করেননি, এই লাশ তাঁর স্বামী জাকিরের। পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে তিনি জাকিরকে হত্যার ঘটনা বর্ণনা করেন।
এ বিষয়ে উপপরিদর্শক আহসান বলেন, বানু আকতারের একার পক্ষে হত্যা করা সম্ভব নয়। এই ঘটনার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্ত করে আর কারো জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান তিনি।
এই হত্যার ঘটনায় আজ শনিবার জাকির হোসেন বিপুর মা জাকিয়া সুলতানা বাদী হয়ে গাবতলী মডেল থানায় বানু আকতারসহ পাঁচজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন।