খুলনায় ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত

খুলনার রূপসা নদীতে ১২তম নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আয়োজনে ও গ্রামীণফোনের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং খুলনা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়।
আয়োজকদের দাবি, এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ নৌকাবাইচ। নৌকাবাইচে লক্ষাধিক দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল বলে দাবি করা হয়।
মানুষের আনন্দ-উৎসবের অন্যতম মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই নৌকাবাইচ। শনিবার সকালে নৌকাবাইচ উপলক্ষে নগরীতে আয়োজন করা হয় একটি বর্ণাঢ্য র্যালি। এরপর দুপুর ২টায় ১ নম্বর কাস্টম ঘাটে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় এই নৌকাবাইচের। আয়োজনটি শেষ হয় বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ মিজানুর রহমান মিজান, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, জেলা প্রশাসক আমিন উল আহসান, খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাহবুব হাকিম, বিসিবির পরিচালক শেখ সোহেল, খুলনা সিটি করপোরেশন প্রধান নির্বাহী পলাশ কান্তি বালা, খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির মহাসচিব শেখ মোশাররফ হোসেনসহ অনেকে।
নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সভাপতি মোল্লা মারুফ রশীদ, সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান রহিম, সহসভাপতি আখতার উদ্দিন পান্নু, প্রধান উপদেষ্টা শেখ আশরাফ-উজ-জামান প্রমুখ।
গ্রামীণফোন থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল ফ্যলে, খুলনা সার্কেল হেড মোল্লা নাফিজ ইমতিয়াজ, খুলনা সার্কেল হেড অব মার্কেটিং পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্যসহ অন্য কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের মোল্লা নাফিজ ইমতিয়াজ বলেন, ‘গ্রামীণফোন সব সময়ই বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পৃষ্ঠপোষক। গ্রামীণফোন মনে করে যে একটি দেশের উন্নয়নে সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের বিরাট ভূমিকা আছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে গ্রামীণফোন তাই সব সময় এ ধরনের অনুষ্ঠানে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।’ গ্রামীণফোন চতুর্থবারের মতো এই নৌকাবাইচ আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করল।
নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি মোল্লা মারুফ রশিদ বলেন, ‘নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে-এই স্লোগান নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। আসুন নদীকে ভালোবাসি, নদীকে ভালো রাখি।’
প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সিনিয়র সহকারী সচিব বিল্লাল হোসেন খান, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা এস কে এম তাসাদুজ্জামান, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক খালেক শিকদার, প্রচার সম্পাদক মিজানুর রহমান জিয়া, কেডিএস সদস্য মো. মোতালেব মিয়া ও সমাজসেবক মনিরুজ্জামান সাগর।
এবারের প্রতিযোগিতায় কয়রা, পাইকগাছা, তেরখাদা, কালিয়া ও নড়াইল থেকে ১২টি বড় ও ১০টি ছোট বাইচদল অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও ফরিদপুর এলাকার ছয়টি বাচারি নৌকা নিয়ে একটি বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছিল।
বড় দলের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে এক লক্ষ টাকা জিতে নেয় কয়রার সুন্দরবন টাইগার। প্রথম রানার আপ হিসেবে ৬০ হাজার টাকা পায় তেরখাদা, খুলনার ভাই ভাই জলপরী। আর দ্বিতীয় রানার আপ পুরস্কার ৩০ হাজার টাকা পায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার সোনার তরী।
ছোট গ্রুপে প্রথম হয়ে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার জিতে নেয় কয়রার সোনার তরী। দ্বিতীয় বিজয়ী দল পাইকগাছার রিয়া নৌকা বাইচদল পায় ৩০ হাজার টাকা। আর তৃতীয় স্থান অধিকারী দল সাতক্ষীরার জয় মা কালী-২ পায় ২০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া বিশেষ বাচারি দলের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার মা গঙ্গা-১ জিতে নেয় ৫০ হাজার টাকা। প্রথম রানার আপ হিসেবে ৩০ হাজার টাকা পান মাদারীপুরের রাজৈরের মা-দুর্গা (হারেজ)। আর দ্বিতীয় রানার আপ পুরস্কার ২০ হাজার টাকা পায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার সোনার তরী।
সন্ধ্যায় রূপসা ঘাটে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এই অনুষ্ঠানে সংগীতশিল্পী ঐশী, খুলনার খুদে গানরাজ শিল্পী রাতুল ও স্থানীয় অন্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে সংগীত পরিবেশন করা হয়।
পুরো আয়োজনটি খুলনা সিটি করপোরেশন, খুলনা জেলা প্রশাসন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ, র্যাব, নৌ পুলিশ, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বন বিভাগ, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, আনসার ও ভিডিপি, বিআইডব্লিউটিএ, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি, রূপসা সেতু কর্তৃপক্ষ ও ট্রলার মালিক সমিতির তত্ত্বাবধানে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।