অসত্য ও অর্ধ-সত্য তথ্য দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন : সুজন

নিজেদের বক্তব্যকে সঠিক দাবি করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্যকে অসত্য ও অর্ধসত্য বলে দাবি করেছে বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। আজ বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের পাঠানো প্রতিবাদের প্রতিক্রিয়ায় এ কথা জানায় সুজন।
সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান ও সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার স্বাক্ষরিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একদিন আগেই নির্বাচন কমিশনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া তথ্যের সমালোচনা করা হয়।
গত ২৫ জুলাই ভোটার তালিকা হালনাগাদ সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে সুজনের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন দাবি করে সুজনের বক্তব্য সঠিক নয়।
সুজনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সুজন যেসব তথ্য প্রকাশ করেছে তার উৎস নির্বাচন কমিশন এবং সুজনের প্রকাশিত তথ্যে কোনো ভুল নেই। এ ছাড়া এসব তথ্য কোনোরূপ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্যও প্রকাশ করা হয়নি। বরং নির্বাচন কমিশনই তার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অসত্য ও অর্ধসত্য তথ্য প্রকাশ করেছে।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমাদের লিখিত বক্তব্যে কোথাও বলিনি যে মোট ভোটারের মধ্যে জেন্ডার গ্যাপ ১২ শতাংশ। বরং প্রথম টেবিলে প্রদর্শিত মোট ভোটার সংখ্যা, পুরুষ ভোটারের সংখ্যা, নারী ভোটারের সংখ্যা, নারী-পুরুষের পার্থক্য ও জেন্ডার গ্যাপ আমাদের লিখিত বক্তব্যে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা আরো সুস্পষ্টভাবে বলেছি যে, মোট ভোটারের মধ্যে জেন্ডার গ্যাপ ছিল ২০০৮ সালে +১.৭৪%, পরবর্তীতে ২০১৩ সালে -০.৩২ এবং ২০১৪-১৫ সালে -০.৭৪। তাই যা আমরা বলিনি কমিশন তা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘খসড়া সাপ্লিমেন্টারি তালিকা অনুযায়ী, আমাদের মোট ৬৪টি জেলার মধ্যে ২৮টি জেলায় জেন্ডার গ্যাপ ১০%-এর ওপরে। অর্থাৎ ২০১৪-১৫ সালে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নতুন ভোটারদের মধ্যে ৫৫ জন পুরুষের বিপরীতে ৪৫ জন নারী। আর নতুন ভোটারদের মধ্যে ফেনীতে জেন্ডার গ্যাপ -৩৫.৩%, লক্ষ্মীপুরে -৩০.৮২%, নোয়াখালীতে -২৬.৪৪%, চাঁদপুরে -২৫.৭২%, কুমিল্লায় -২৩.৪%, কক্সবাজারে -২২.৫৮% এবং ভোলায় -২০.৮৪%। আমরা কোথায়ও বলিনি এসব জেলার পুরো তালিকার মধ্যে জেন্ডার গ্যাপ -১২%। এসব তথ্যের সূত্র নির্বাচন কমিশন।’
বিজ্ঞপ্তিতে সুজন আরো বলেছে, ‘ভোটার তালিকা বিধিমালা ২০১২-এর ধারা ৩(১)(গ) অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহকারীদের ভোটার নিবন্ধন করার কথা থাকলেও, তা করা হয়নি।’ বাড়ি বাড়ি না গিয়ে হালনাগাদ করার বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশ হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯-এর ১১ ধারায় প্রতি বছর জানুয়ারিতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কথা থাকলেও, নির্বাচন কমিশন তা অমান্য করেছে বলে সুজন দাবি করেছে।
“স্পষ্টতঃ ২০০৮ সালে অনেক পুরুষ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি।” নির্বাচন কমিশনের এ বক্তব্যকে বিশ্বাসযোগ্য নয় দাবি করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০০৮ সালের ভোটার তালিকা তৃতীয় পক্ষ (একটি বিদেশি সংস্থা) দ্বারা নিরীক্ষা করা হয় এবং তালিকাটি প্রায় নির্ভুল বলে প্রত্যায়িত হয়। এ ছাড়া আমাদের ভোটার তালিকায় পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি হওয়া উচিত। কারণ আমাদের প্রায় এক কোটি জনগোষ্ঠী বিদেশে কর্মরত এবং এদের প্রায় সবাই পুরুষ, যাদের বেশির ভাগই ভোটার নন। উপরন্তু আমাদের দেশে নারীদের আয়ুষ্কাল অপেক্ষাকৃত বেশি।’