লাউ চাষে লাখপতি

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি আর ঘরে ঘরে নার্সারির কারণে খুলনার ফুলতলা উপজেলার নাম এখন দেশ-বিদেশের অনেক মানুষ জানে। এ ছাড়া মাছের পোনা আর কোয়েল পাখি উৎপাদন করেও দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন এখানকার প্রান্তিক চাষিরা।
সম্প্রতি লাউ চাষের দিকে ঝুঁকেছেন ফুলতলার চাষিরা। দো-আঁশ মাটিতে চাষ করা এই লাউ এখন এই অঞ্চলের জনপ্রিয় ফসল। লাউ ও এর শাক বিক্রি করে এক মৌসুমেই চাষিরা হচ্ছেন লাখপতি।
স্থানীয় কৃষকরা জানালেন, ইটের ভাটা আর নার্সারিতে ব্যবহার হচ্ছে এলাকার ৬৫ শতাংশ ভূমি। বাকি জমিতে মাছের খামার। এই খামারে আইলের চার পাশে গড়ে উঠেছে শাকসবজির বাগান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য লাউ। উপজেলার বরণপাড়া, ধোপাখোলা, শিরোমনি, গিলাতলা, মশিয়ালি, গাড়াখোলা, ছাতিয়ানি, পিপরাইল, বেজেরডাঙ্গা, বেগুনবাড়িয়া, ঢাকুরিয়া, নাউদাড়ি, মাতমডাঙ্গা, পটুয়াবান্দা গ্রামের ৮৪ হেক্টর জমিতে লাউয়ের আবাদ করা হয়।
বছরে দুই দফা এখানকার চাষিরা লাউ চাষ করেন। বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত প্রথম দফা আর কার্তিক থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত শেষ দফা।
ফুলতলার যে লাউ চাষিরা উল্লেখযোগ্য তাঁরা হচ্ছেন বরণপাড়া গ্রামের আমজাদ হোসেন মোল্লা, হাসিবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম শেখ, মশিয়ালি পূর্বপাড়ার হায়দার আলী, ঈসা খাঁ, কামাল হোসেন, ধোপাখোলা গ্রামের সালাম মোল্লা, হায়দার মোল্লা, নজরুল গাজী, কবির মোল্লা, নজরুল খাঁ, সরো কাজী, জামিরা গ্রামের শাহাদাত হোসেন, পয়গ্রাম কসবা গ্রামের মিজানুর রহমান, উত্তরডিহি গ্রামের কার্তিক চন্দ্র, পটুয়াবান্দা গ্রামের বিথিকা মণ্ডল, কালাচাঁদ হায়দার, অসিত মণ্ডল, বিশ্বজিৎ রায় ও বুদ্ধদেব মণ্ডল।
বরণপাড়া গ্রামের চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, লাউ চাষের জন্য বিশেষ ক্ষেত্র বা মাদা করার সময় টিএসপি ও পটাশ সার ব্যবহার করা হয়। তার ১৫ দিন পর মাদায় দুই থেকে তিনটি বীজ রোপণ করা হয়। ৩০ দিন পর জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। চার বিঘা জমিতে তিনি ২০০ মাদা তৈরি করেছেন। এ জন্য খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। বছরে লাউ ফল ও শাক বিক্রি হয়েছে লাখ টাকার।
পটিয়াবান্দা গ্রামের চাষি মিজানুর রহমান পাঁচ বিঘা মৎস্য খামারের আইলে লাউ চাষ করে সফল হয়েছেন। তিনি বলেন, এই চাষে উল্লেখযোগ্য কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। তিনি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য তিন সপ্তাহ পরপর ফসফেট, পটাশ, ইউরিয়া ও জৈব সার ব্যবহার করেন।
বরণপাড়া গ্রামের আরেক চাষি আমজাদ হোসেন মোল্লা লাউয়ের পাশাপাশি শিম, মিষ্টিকুমড়া, টমেটো ও পানিকচুরও আবাদ করেন।
ফুলতলা উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শিখা মল্লিক, সালমা সুলতানা, চামেলী মল্লিক জানান, সব গ্রামেই কম-বেশি লাউয়ের আবাদ হচ্ছে। চাষিরা প্রতিবছরই লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলার অতিরিক্তি কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দেবানন্দ বিশ্বাস জানান, লাউয়ের পাশাপাশি শাক বিক্রি করেও চাষিরা লাভবান হচ্ছে। ফলে এই এলাকায় মাছের খামারের পাশের কোনো আইল এখন আর পতিত নেই। লাউয়ের আবাদে ভরে গেছে খামারের আইলের চার পাশ। এখানকার উৎপাদিত লাউ ও শাক দেশের বিভিন্ন স্থানের চাহিদা মেটাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরো জানান, ফুলতলার ১৫ হাজার ৬০০ কৃষক পরিবার নানা ফসল উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তার মধ্যে লাউচাষির সংখ্যা এক হাজারের বেশি।