গেলেন দাওয়াত খেতে, পাবেন জেলের খাবার!

খুলনার কয়রা উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলামসহ দলের ১০ নেতাকর্মীকে গত শনিবার দুপুরে আটক করে পুলিশ। এর দুই দিন পর আজ সোমবার দুপুর ২টার দিকে তাঁদের আদালতে সোপর্দ করে এবং তিন দিনের রিমান্ডে নেয়।
পুলিশের দাবি, আটক নেতাকর্মীরা সরকারের বিরুদ্ধে নাশকতার পরিকল্পনা করতে জড়ো হয়েছিল।
কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে তাঁরা একটি বাড়িতে গেলে পুলিশ কোনো অভিযোগ ছাড়াই তাঁদের আটক করে।
এ নিয়ে আজ সোমবার দুপুরে খুলনা জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা। তিনি দাবি করেন, গত ৪ নভেম্বর দুপুরে কয়রা উপজেলার বাবুরাবাদ গ্রামে রবিউল ইসলামের বাড়িতে মেয়ে দেখার অনুষ্ঠানে যান কয়রা উপজেলা ও পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির নেতারা। পরে পুলিশ সেই বাড়ি ঘেরাও করে ১০ নেতাকে আটক করে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। এই মামলায় ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত দেড় শতাধিক ব্যক্তির নামে মামলা করা হয়েছে।
এই মামলাকে হয়রানিমূলক দাবি করে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানান শফিকুল আলম মনা। তিনি আরো জানান, ৪ নভেম্বর দুপুরে গ্রেপ্তার করার পর ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও বিএনপি নেতাদের আদালতে বা জেলা করাগারে না পাঠিয়ে থানায় নির্যাতন করা হয়। যা বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
এ ব্যাপারে কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক জানান, বিয়ের জন্য মেয়ে দেখাদেখি নয়, স্থানীয় রবিউল ইসলাম দলীয় পদ লাভের আশায় দুই উপজেলা ও জেলা বিএনপির দেড়শ লোকের জন্য দুপুরে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছিলেন। তাঁরা সেখানে গিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে নাশকতার পরিকল্পনা করেছেন এই অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে।
ওসি আরো জানান, আটক নেতাকর্মীদের গতকাল রোববার আদালতে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বিলম্ব হওয়ায় আদালতে স্থান না থাকায় তাঁদের আবার থানায় ফিরিয়ে আনা হয়। আজ সোমবার দুপুর ২টার পর তাঁদের আদালতে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিজভীর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, আপনারা দেখেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসা শেষে লন্ডন থেকে ফেরার পর বিমানবন্দরে চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানাতে জনতার ঢল নেমেছিল। তিনি রোহিঙ্গাদের ত্রাণসহায়তা দিতে ও সহমর্মিতা জানাতে উখিয়া গেলে গোটা সড়কে লাখ লাখ মানুষ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে বিপুল অভ্যর্থনা দেয়। জেলায় জেলায় বিএনপি ঘোষিত সম্প্রতি বিভিন্ন বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অংশ নেন সাধারণ মানুষ। মূলত বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে জনতার ঢল দেখলে ভয়ে কাতর হয়ে পড়ে। তাই সরকারের নির্দেশে দেশব্যাপী বিনা কারণে আবার গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে পুলিশ। শনিবার খুলনা জেলা বিএনপির নেতা কাজী হাবিবুর রহমান রিটু, কয়রা উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মমরেজুল ইসলাম, পাইকগাছা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুস ছাত্তার, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ, যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন ডাবলু, রূপসা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি বিকাশ কুমার মিত্র ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালের ছোট ভাই জাহিদুল বারী রনিসহ ১০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া গতকাল বগুড়া জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও শহর ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক ফিরোজ হোসেন, শাজাহানপুর যুবদল নেতা নূর মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করেছে সরকার। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা বিএনপির নেতা ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর মফিজুল ইসলাম মফিজকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল পুলিশের বিশেষ অভিযানের নামে ঝিনাইদহে বিএনপি ও বিরোধী দলের ৭৯ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রিজভী বলেন, ‘আমি দলের পক্ষ থেকে বিএনপি নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে তাঁদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।’