‘ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই বাসায় আসব বাবা’

‘আমার ছেলে গতকাল (মঙ্গলবার) সকালবেলা বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। এরপর স্বাভাবিকভাবেই তাঁর সাথে সারা দিনে দুই-তিনবার কথা হয়েছে। সর্বশেষ বিকাল ৪টার দিকে আমি তাকে ফোন করে বলেছিলাম, বাসায় কখন আসবি ? তখন সে বলেছিল, ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই বাসায় আসব বাবা। এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে ফোন করে দেখি তার ফোন নাম্বার বন্ধ।’
এভাবেই ছেলে রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুবাশ্বার হাসান সিজারের প্রসঙ্গে কথা বলছিলেন তাঁর বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মোতাহের হোসেন।
আজ বুধবার এনটিভি অনলাইনকে মোতাহের হোসেন বলেন, গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে সিজারের ফোন বন্ধ পেয়ে তাঁরা তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়েও খোঁজ নেন তিনি। কিন্তু কোথাও ছেলের সন্ধান না পেয়ে রাতে খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর আজ সকালে তিনি র্যাব ৩-এর কার্যালয়ে গিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ছেলের কোনো খোঁজ পাননি মোতাহের হোসেন।
দক্ষিণ বনশ্রীর জে ব্লকের ১২/৩ নম্বর সড়কের বাড়িতে বাবা, মা আর ছোট বোনের সঙ্গে থাকতেন মুবাশ্বার হাসান সিজার। আজ সেই বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর ছোট বোন তামান্না তাসমিনের সঙ্গে। তিনি এনটিভি অনলাইনকে জানান, সিজার প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বাসায় ফিরে আসতেন। কিন্তু গতকাল সন্ধ্যার পরে থেকেই তাঁর ফোন নম্বর বন্ধ। তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবে তাঁরা ভেবেছিলেন যে ফোনে হয়তো চার্জ নেই তাই বন্ধ। কিন্তু রাত ১০টার পরেও যখন তিনি বাসায় ফেরেননি তখন তাঁরা চিন্তা শুরু করেন। এরপর রাতেই থানায় জিডি করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাঁদের যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে উল্লেখ করে তামান্না বলেন, তাঁরা আশা করছেন শিগগিরই সিজারকে খুঁজে পাওয়া যাবে।
সিজারকে কেউ কোনো হুমকি দিয়েছিল কি না জানতে চাইলে তামান্না বলেন, সে রকম কিছু ছিল না।
তাহলে কিছুদিন আগে বাসার ফটকে ক্লোজস সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) কেন বসানো হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে সিজারের বোন বলেন, এই বিষয়েও তাঁর তেমন কিছু জানা নেই।
দক্ষিণ বনশ্রীর যে সড়কে সিজারদের বাড়ি, তার ঠিক উল্টো দিকেই রয়েছে মেসার্স জাহাঙ্গীর ট্রেডার্স নামের একটি এলপি গ্যাসের দোকান। দোকানটির মালিক মো. জাহাঙ্গীর আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, প্রায় ২৮ বছর ধরে তিনি ওই এলাকাতেই বসবাস করছেন। আর মোতাহার হোসেন এই বাড়িতে আছেন প্রায় ১৩। বিভিন্ন সময়ে ওই বাড়ির ছোটখাটো কাজ করে দিয়েছেন জানিয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, গত রাত ১২টার দিকে সিজারের বাবা তাঁকে জানান যে, তাঁর ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই থানায় জিডি করতে যাচ্ছেন তিনি। এরপর আজ সকালে জানতে পারেন যে সিজারের এখনো কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। মুবাশ্বার হাসান সিজারকে ভালো ছেলে উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে কখনো কোনো অভিযোগ শোনা যায়নি।
এ বিষয়ে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জানান, গতকাল সকাল ৭টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যান সিজার। এরপর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ক্লাস নেন তিনি। পরে বিকেল ৪টা থেকে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তখন থেকেই সিজারের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। পরে এ বিষয়ে রাতেই থানায় একটি জিডি করেন সিজারের বাবা মোতাহের হোসেন।