‘শিশু ধর্ষণের ৯০ ভাগই প্রকাশ পায় না’
গণমাধ্যম শক্তিশালী হওয়ার কারণে এখন কিছু কিছু শিশু নির্যাতন বা ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ পায়। কিন্তু তা প্রকৃত অবস্থার তুলনায় খুবই নগণ্য বলে মনে করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল। তাঁর মতে, মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ শিশু নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ পায়। বাকি ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশই প্রকাশ পায় না।
ডা. মোহিত কামাল এনটিভিকে বলেন, ‘আপনারা কয়েকটি ঘটনা দেখাচ্ছেন, যা আসলে খুবই অল্প। ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশই আপনারা দেখাতে পারেন না; লুকিয়ে রাখা হয় সমাজে। আমাদের কাছে যে রোগীরা আসে বা যে তথ্যগুলো দেওয়া হয়, তাতে আমরা বুঝতে পারি, ধর্ষণের ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটছে।’
‘কারণ, ধর্ষণ হলে মা-বাবারা তা লুকিয়ে রাখেন। ৬-১০ বয়সের অনেক শিশু নির্যাতনের শিকার হয়। তারা আমাদের কাছে এসে নির্যাতনের ঘটনা বলে। তারা বলে, শরীরকে তাদের ঘৃণা লাগে,’ যোগ করেন মোহিত কামাল।
এদিকে শিশু অধিকার ফোরাম বলছে, গত জুলাই মাসেই ধর্ষিত হয়েছে ৫০ শিশু। দুপক্ষের আপস আর বিচারের দীর্ঘসূত্রতাকে শিশু ধর্ষণের ঘটনার বিচারের মূল প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ধর্ষণের শিকার অনেকেই চিকিৎসার জন্য আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে। সেখানকার চিকিৎসকরা বলছেন, সিলেটের রাজনের ভিডিও ফুটেজ দেখে সারা দেশের মানুষ আঁতকে উঠেছিল। অথচ তাঁদের এ রকম কিংবা তার চেয়েও বেশি আঁতকে ওঠার মতো ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় প্রায় প্রতিদিনই। এমনকি ধর্ষণের শিকার এক বছরের শিশুকে চিকিৎসা দেওয়ার অভিজ্ঞতাও রয়েছে এখানকার চিকিৎসকদের।
ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সমন্বয়ক ডা. বিলকিস বেগম এনটিভিকে বলেন, অনেক শিশুকে নিয়ে আসা হয় একেবারে রক্তাক্ত অবস্থায়। এদের অনেকেই প্রতিবেশী বা নিকটাত্মীয়দের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়।
মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর সারা দেশে ৩২২ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। শিশু অধিকার ফোরাম বলছে, গত বছর জুলাই মাসেই ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫০ শিশু। এসব তথ্যের মূল ভিত্তি গণমাধ্যমের খবর। বলা হয়, গণমাধ্যমের বিকাশের কারণে এখন এসব ঘটনা বেশি বেশি মানুষ জানতে পারছে। কিন্তু জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষণ বলছে ভিন্ন কথা।
শিশু ধর্ষণের বিচারের ক্ষেত্রে মূল বাধা হলো, এসব ঘটনার বেশির ভাগই আপস হয়ে যায়। অথচ আইন বলছে, এসব ঘটনায় কোনোভাবেই আপস করা যাবে না।
এ ব্যাপারে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সমন্বয়ক বলেন, ‘পুলিশ হয়তো এ ব্যাপারে মামলা করে। আমরা সার্টিফিকেট দিলাম। কিন্তু অভিভাবকরা হয়তো আপস করে ফেলছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টাকার বিনিময়ে এসব ঘটনা আপস করা হয়।’
‘আবার যেসব মামলা চলে, সেখানেও আছে বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি’—এমন অভিযোগ বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট এলিনা খানের। তিনি বলেন, নারী ও শিশু দমন আইন-২০০২ এবং সংশোধিত আইন-২০০৩-এ স্পষ্ট করে বলা আছে, মামলাটির ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করতে হবে এবং ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। সেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, এ ক্ষেত্রে কখনো পাঁচ বছর, কখনো ছয় বছর লেগে যাচ্ছে। মামলায় কেন এত সময় নিচ্ছে, আদালতের সেটাও দেখা উচিত।