জাপানে যাচ্ছে সুন্দরবনের মধু

সুন্দরবনের মধু এই প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে জাপানে পাঠানো হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে এক হাজার মেট্রিক টন মধু রপ্তানিও হয়েছে। মধুর গুণাগুণ যাচাই শেষে জাপানিরা বাণিজ্যিকভাবে মধু নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শুরু হয়েছে রপ্তানির প্রক্রিয়া।
শ্যামনগরের সুন্দরবনের হরিনগর গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই মধু সংগ্রহ করেন। মধু সংগ্রহকারীদের মৌয়াল বলা হয়। মৌয়াল পরিবারের নারী সদস্যরা মধু সংগ্রহের কাজ করেন। মৌয়ালদের নামের সঙ্গে মিলিয়ে এ মধুর নাম রাখা হয়েছে ‘মৌয়াল’। এলাকার ৫০টি মৌয়াল পরিবার দুই বছর আগে ‘সুন্দরবন মৌয়াল শ্রমজীবী সমবায় সমিতি’ গড়ে তুলেন। সহায়তায় এগিয়ে আসে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বেডস)। এই সংস্থাটি মৌয়ালদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে মধু কিনছে। বিদেশে রপ্তানির জন্য এই গ্রামেই স্থাপন করা হয়েছে যন্ত্রপাতি।
মৌয়ালের প্রকল্প ব্যাবস্থাপক নাহিদ মাহমুদ জানান, জাপানে পরীক্ষামূলকভাবে এক হাজার মেট্রিক টন মধু রপ্তানি করা হয়েছে। মধুর সংগ্রহ ও প্রক্রিয়া দেখতে সরেজমিনে জাপান থেকে দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল সুন্দরবন এবং মৌয়াল প্রসেসিং কেন্দ্র পরিদর্শন করে গেছেন। জাপানিরা আগ্রহ প্রকাশ করায় বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
নাহিদ মাহমুদ বলেন, সুন্দরবনের প্রাকৃতিক এই মধু শতভাগ খাঁটি। তাঁদের এ উদ্যোগে সহযোগিতা করছে জাপানের বিদেশসংক্রান্ত মন্ত্রণালয়, জাপানি প্রতিষ্ঠান জাপান এনভায়রনমেন্টাল ফোরাম (জিফ) ও বেডস।
৪০ বছর ধরে মধু সংগ্রহের কাজ করছেন আদম আলী। তাঁর ভাষ্য, ‘বনে দিন দিন মধুর পরিমাণ কমতিছে। ফলে আয় কমতিছে, তবে বিপদ বাড়তিছে। বিপদ দুই ধরনের, এক হলো ডাকাত আর দুই বাঘ। এ দুই অত্যাচারে মধু সংগ্রহের ভাবনা বাদ দিতি চাইছিলাম। তবে সমিতি করায় দুটি বছর একটু লাভ হচ্ছে।’
আদম আলী আরো বলেন, ‘সমিতির সদস্যরা মধু আইনে বোতলে ভর্তি কইরে দেশের বড় বড় বাজারে বিক্রি করতিছে। আমাদের মধু জাপানেও যাচ্ছে। এ কারণে দাদনদারদের কাছে কম দামে মধু বিক্রি করতি হয় না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেডসের প্রধান নির্বাহী মাকছুদুর রহমান বলেন, মৌয়াল মধু বিভিন্ন শপিং মলে বিক্রি হচ্ছে। আর জাপানে কিছু পাঠানো হয়েছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জাপানে পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।