জামায়াত নেতা সুবহানের মামলার রায় আজ

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুহাম্মদ আবদুস সুবহানের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ বুধবার। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ রায় ঘোষণার এই দিন ঠিক করেন।
গত বছরের ৪ ডিসেম্বর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
গতকাল এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলেন, প্রতিটি অভিযোগ তাঁরা প্রমাণ করতে পেরেছেন। তাঁরা সুবহানের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছেন।
তবে আসামিপক্ষ দাবি করছে, সুবহানের বিরুদ্ধে আনা নয়টি অভিযোগের একটিও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা যায়নি। তাই তিনি বেকসুর খালাস পাবেন বলে আশাবাদী তারা।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ নয়টি অপরাধের অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সুবহানের বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। সেদিন বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য ২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি দিন নির্ধারণ করেন।
মামলা চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৩১ সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। আর আসামিপক্ষ হাজির করে একজন সাফাই সাক্ষী।
এর আগে ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধুর সেতুর পূর্ব পাশ থেকে আবদুস সুবহানকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
৩০ সেপ্টেম্বর জামিন চেয়ে আবেদন করেন জামায়াতের এই নেতা। তবে ২ অক্টোবর জামিন আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আবদুস সুবহানের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর সুবহানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ২ অক্টোবর থেকে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি শুরু হয়।
শুরুতে আবদুস সুবহানের মামলা ট্রাইব্যুনাল ১-এ বিচারাধীন থাকলেও ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এটিকে ট্রাইব্যুনাল ২-এ স্থানান্তর করেন ট্রাইব্যুনাল ১-এর বিচারক।
অভিযোগ রয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকায় অপারেশন সার্চলাইট শুরু হওয়ার পর থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহায়তায় পাবনা জেলায় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট শুরু করেন আবদুস সুবহান। তিনি পাবনা জেলা জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আমির ও কেন্দ্রীয় জামায়াতের শুরা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। পরে পাবনা পিস কমিটির সেক্রেটারি ছিলেন।
আবদুস সুবহানের বিরুদ্ধে যেসব অপরাধের অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঈশ্বরদী জামে মসজিদে আশ্রয় নেওয়া স্বাধীনতাকামী মানুষকে বিহারিদের সহায়তায় হত্যা করা, ১৩ এপ্রিল ঈশ্বরদীর যুক্তিতলা গ্রামে লুটপাট ও পাঁচজনকে হত্যায় নেতৃত্ব দেওয়া, ২ মে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে নিয়ে সাহাপুর গ্রামে বাড়িঘর লুটপাট ও কয়েকজনকে হত্যা, ১২ মে সুজানগরের কয়েকটি গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে তিন-চারশ মানুষকে হত্যা।