‘বক্তব্য ভুল হলে আ. লীগ নেতারা ধরিয়ে দিবে’

খুলনায় বিভাগীয় জনসভা সমাবেশকে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অংশ বলে জানিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে ভুল হলে আওয়ামী লীগ নেতাদের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আজ বুধবার দুপুরে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার নেতাদের নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিএনপি কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংকালে নজরুল ইসলাম খান এসব কথা বলেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘গত ২৭ ফেব্রুয়ারি খুলনায় জনসভার কথা খুলনা পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুলিশ তখন বলেছে, কোনো রাস্তায় জনসভা করা যাবে না। পরে শহীদ হাদিস পার্কে জনসভায় করার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। বলছে ঘরে বসে করেন, অফিসে বসে করেন। উনারা যেই ধরনের গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, সেই ধরনের গণতন্ত্রে ওইটাই ভালো।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে, তাই হচ্ছে। জনসভা করা, সেই শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটা অংশ। আমরা কাউকে ডিস্টার্ব করতে চাই না। আমরা সভায় যাব, আমরা আমাদের বক্তব্য রাখব, এই অধিকার আমার আছে। আমি রক্ত দিয়ে যেই অধিকার অর্জন করেছি, কেউ আমাকে দেয় নাই। আমি বক্তব্য রাখব। আমার বক্তব্য ভুল হইলে, আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় নেতা আছেন তাঁরা বক্তৃতা করবেন। আমার বক্তব্যের ভুল ধরায়া দিবে। আমি জবাব দিতে পারলে দিব। না দিতে পারলে দিব না। আমি ২০ হাজার লোকের মিটিং ডাকলে আপনি ৩০ হাজার লোকের মিটিং ডাকবেন। আমরা এক লাখ লোকের মিটিং করলে আপনারা দেড় লাখ লোকের মিটিং করবেন। এই তো নিয়ম।’
নজরুল ইসলাম খান আরো বলেন, ‘গণতন্ত্রের পথ বন্ধ করে দিলে যা অবশিষ্ট থাকে সেটা কারো জন্য কাম্য নয়। আমরা গণতন্ত্র চর্চা করতে চাই। আর সে চর্চায় আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই এবং আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানটা করতে চাই। একটিই কারণ, বিএনপি একটি নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী দল। এই দল নেতার নির্দেশ মেনে চলে।’
মুক্তিযুদ্ধ কোনো একচেটিয়া ব্যাপার না উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আপনারা স্বাধীনতার কোন চেতনা বাস্তবায়ন করতেছেন? আমরা যখন যুদ্ধে গেলাম, আমার বড় ভাই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, আমার ছোট ভাই বীরপ্রতীক। আমরা স্বাধীনতার পক্ষে লোক দেখানো বিএনপি করি নাই। স্বাধীনতার পক্ষের লোক হলেন মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবির। মুক্তিযুদ্ধের সময় সাবালক ছিল, যুদ্ধে যায় নাই কেন? কারণ উনারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক। এখন মুক্তিযোদ্ধার চাইতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দেখলাম খালি বেশি। মুক্তিযুদ্ধ কারো একচেটিয়া ব্যাপার না। কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ ছাইড়া দিল। সিভিলিয়ান বীরোত্তম কাদের সিদ্দিকী। তাঁকে বলা হলো, নব্য রাজাকার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় প্রধান যিনি, ডেপুটি চিফ, ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার, বিমান বাহিনীর প্রধান, আওয়ামী লীগও তাঁকে মন্ত্রী বানাইল। তিনি বই লিখছেন, যে, যুদ্ধের প্রস্তুতি না নিয়েই জনগণকে যুদ্ধে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছে।’
বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে নানাভাবে উসকে দেওয়ার অভিযোগ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘তারা উসকানি দিচ্ছে। পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার চেষ্টা করছে। আপনে মনে কষ্ট নিয়া একটা গাড়িতে ঢিল মারবেন, তারা সে গাড়িতে আগুন ধরায় দিয়ে লোক মেরে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করবে। এই সুযোগ আমরা এই কয়দিন দেই নাই। আগামী দিনগুলোতেও দিব না।’
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী বরকত উল্লাহ বুলু, খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুজ্জামান মনিসহ অন্যরা। বৈঠক শেষে তাঁরা এই সংবাদ সম্মেলন করেন।