হবিগঞ্জে বজ্রপাতে এক মাসে ২৩ জন নিহত

হবিগঞ্জে বজ্রপাতের শিকার হয়ে আজ বুধবারও ছয়জন নিহত হয়েছে। এই নিয়ে গত এক মাসে এই জেলায় বজ্রপাতে ২৩ জনের মৃত্যু হলো। এর মধ্যে শুধু বানিয়াচং উপজেলায় মারা গেছেন ১২ জন।
আজকে বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তিরা হলেন জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বৈলাকপুর গ্রামের হরিচরণ পালের ছেলে নারায়ণ পাল ও আমড়াখাই গ্রামের হাবিব উল্লার ছেলে আবু তালিব, মাধবপুর উপজেলার পিয়াইম গ্রামের রামচরণ সরকারের ছেলে জহরলাল সরকার, লাখাই উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের জাহেদ মিয়ার ছেলে চকি মিয়া, সুনামগঞ্জের ধাইপুর গ্রামের বসন্ত দাসের ছেলে স্বপন দাস ও সিরাজগঞ্জের নওসের মিয়ার ছেলে জয়নাল মিয়া। এছাড়া বজ্রপাতে আহত হয়েছে চারজন।
এমন অবস্থায় হবিগঞ্জে ধানের বাম্পার ফলন হলেও সংকট দেখা দিয়েছে ধানকাটা শ্রমিকের। ভয়ে উৎকণ্ঠায় অনেকে মাঠে যেতে চাইছেন না। ফলে বোরো ফসল কাটা ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে বজ্রপাতের ঝুঁকি কমাতে বেশি করে তালগাছ লাগানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আলী জানান, বজ্রপাত থেকে বাঁচার জন্য হাওরের বিভিন্ন স্থানে তাল গাছ লাগানো হবে।
জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানায়, গত ৪ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই কৃষি শ্রমিক। চলতি বোরো মৌসুমে হাওরে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতের শিকার হয়ে তারা মারা যান।
আবার, বজ্রপাত শুধু হাওরেই আঘাত হানছে না, হবিগঞ্জ শহরের বাড়িঘরেও আঘাত করছে।
গতকাল মঙ্গলবার বজ্রপাতে হবিগঞ্জ শহরের ফায়ার সার্ভিস রোড এলাকায় দেওয়ান মহিবুর রহমানের বাসায় গ্যাসের মিটার পুড়ে যায়। ফায়ার স্টেশন কাছে থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় এলাকাবাসী।
হবিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, বিকট শব্দে বজ্রপাত ঘটলে ওই বাসার গ্যাসের মিটারে আগুন লেগে মিটারটি পুড়ে যায়। এক পর্যায়ে আগুন গ্যাস মিটার থেকে বিদ্যুৎ সংযোগে লেগে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে, ফায়ার সার্ভিস না গেলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ জানান, বজ্রপাতে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সরকারি সাহায্য দেওয়া হয়েছে। যে উপজেলায় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে সেখানকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিহতের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের হাতে সাহায্যের টাকা দিয়ে এসেছেন বলেও তিনি জানান।
এর আগে বানিয়াচং উপজেলায় বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন জাতুকর্ণপাড়া মহল্লার শামছুল হক (৩৮), মাটিকাটা গ্রামের রুবেল মিয়া (১৮), পৈলারকান্দি গ্রামের আমির আলী (৩৫), হিয়ালা গ্রামের মঈন উদ্দিন খাঁ (১১), দৌলতপুর গ্রামের অধীর বৈষ্ণব (২৭), বসু বৈষ্ণব (৩২), মুরাদপুর গ্রামের বাসিন্দা জোবায়ের মিয়া (৩২), ভল্লবপুর গ্রামের শাহীন মিয়া (২৫), বাশিয়াপাড়া গ্রামের মো. আজিম উদ্দিন (৪০), মুরারআব্দা গ্রামের রনধীর চন্দ্র দাশ (৪৫) এবং সুনামগঞ্জের ধাইপুর গ্রামের স্বপন দাস ও সিরাজগঞ্জের জয়নাল মিয়া।
লাখাই উপজেলায় নিহত হয়েছেন সুজন গ্রামের আপন মিয়া (৩০) ও রুহুল মিয়া (৬০)। বাহুবল উপজেলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন সুয়াইয়া গ্রামের রাজু মিয়া (৩০) ও উত্তর ভবানীপুর গ্রামের মো. আবুল কালাম (৩৫)।
এ ছাড়াও রয়েছেন নবীগঞ্জ উপজেলার রোকনপুর গ্রামের আব্দুল জব্বার (৫৫) এবং চুনারুঘাট উপজেলার দেওরগাছ ইউনিয়নের জোয়ালভাঙ্গা গ্রামের সুজন মুন্ডা (২৭) ও তাউসী গ্রামের গৃহবধূ হেনা বেগম।