কুড়িগ্রামে বন্যা
‘কোনো মেম্বার-চেয়ারম্যান এ পর্যন্ত খোঁজ নেয় নাই’

কয়েক দিনের টানা বর্ষণে কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। অপ্রতুল ত্রাণ, জল নিষ্কাশনের উপায় না থাকা আর উদ্ধারকাজের দুর্বলতা জনজীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে। বন্যার্তদের অভিযোগ, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা যথাযথ উদ্যোগ না নেওয়ায় পরিস্থিতি মন্দ থেকে মন্দতর হয়েছে।
বন্যার জলে বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বন্যার্ত এলাকায় নৌকা কিংবা কলাগাছের ভেলাই বাহন হিসেবে কোনোমতে টিকে আছে। কাজ ও ত্রাণের অভাবে খাদ্যসংকট এখন চূড়ান্ত। চারণভূমিগুলো প্লাবিত হওয়ায় গো-খাদ্যের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরযাত্রাপুরের বাসিন্দা ছকিনা বেগম বলেন, ‘টানা ১৫ দিন ধরে পানিতে আছি। খাবার নাই, কাজ নাই। নদীতে মাছও পাওয়া যায় না। ছোওয়া-পোয়া নিয়া খুব কষ্টে খেয়ে না-খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। কোনো মেম্বার-চেয়ারম্যান এ পর্যন্ত খোঁজ নেয় নাই।’
একই চরের বাসিন্দা আবেদ আলী বলেন, ‘বর্তমানে চরে কোনো কাজ নাই বাহে। নিজে খাই কী, গরু-ছাগলক খাওয়াই কী? আবাদপাতি তো শেষ হয়া গেছে। বাঁচার কোনো উপায় নাই বাহে। সরকার এগুলা দেখে না।’
এদিকে আজ বুধবার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। জেলার নয়টি উপজেলার ৬৩ ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সোয়া এক লাখ পরিবারের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ।
এদিকে কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তাসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জানান, জেলা প্রশাসন থেকে বানভাসি মানুষের জন্য এ পর্যন্ত প্রায় আড়াইশ টন চাল ও আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় বানভাসি অনেক মানুষের ভাগ্যে ত্রাণই জোটেনি। তিনি জানান, কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আবারো অবনতি হওয়ায় নতুন করে ১০ লাখ টাকা ও ৫০০ টন চাল বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৭ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার এবং কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।