বাঁশখালীতে ‘জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’, অনেক অস্ত্র উদ্ধার

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও জঙ্গি প্রশিক্ষণের সরঞ্জামসহ পাঁচজনকে আটক করেছে র্যাব। আজ রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার সাধনপুর ইউনিয়নের লটমনি পাহাড়ের মাওলানা মোবারক হোসেন ও আব্দুল আজিজের মালিকানাধীন একটি খামার থেকে তাঁদের আটক করা হয়।
আটক ব্যক্তিরা হলেন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার মিঠাপুকুর এলাকার আইয়ুব আলীর ছেলে মোবাশ্বের হোসেন (১৭), ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার নূর মোহাম্মদের ছেলে আবদুল খালেক হুরাইরা (২১), টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার উড়িয়াবাড়ী এলাকার চাঁন মিয়ার ছেলে আমিনুল ইসলাম হামজা (২২), একই জেলার মির্জাপুর উপজেলার মাহামুপুর এলাকার দরবেশ আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান ও গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া উপজেলার কয়েকা এলাকার মোফাছছল হোসেনের ছেলে আমির হোসাইন ইসহাক । তাঁদের র্যাবের হেফাজতে রাখা হয়েছে।
দুপুর ১২টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) মুফতি মাহমুদ জানান, আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে তিনটি একে-২২ রাইফেল, ছয়টি পিস্তল, একটি রিভলবার, তিনটি এলজি, ৭৫১টি গুলি, সাতটি চাপাতি, দড়ি, জুতা, ওয়াকিটকি, কম্বল, জ্যাকেট, ধারালো অস্ত্রসহ প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
রাতের বেলায় জঙ্গিরা এ দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় গেরিলা প্রশিক্ষণ নেয়। তারা বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যুদ্ধের কিছু ফুটেজ তারা ব্যবহার করে। এসব ফুটেজ দেখে তারা প্রশিক্ষিত হয়। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে অন্যান্য জঙ্গিদেরও আইনের আওতায় আনা যাবে বলে জানান র্যাবের পরিচালক।
এর আগে র্যাব-৭-এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সোহেল মাহমুদ জানিয়েছিলেন, লটমনি পাহাড়ে সকাল থেকে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। সেখানে একটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে আটক ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদে বাঁশখালীর এই ক্যাম্পটির খবর জানতে পারেন।
চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার দক্ষিণে লটমনি পাহাড়ে রোববার সকালে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি বনভূমির তিন হাজার একর পাহাড়ি এলাকার মধ্যভাগে দেড় একর জায়গা ঘিরে এ খামার গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে টিন শেডের কয়েকটি ঘরে রয়েছে ছাগল ও ভেড়ার খামার। আরেকটি রুমে রাখা হয়েছে জঙ্গি সন্দেহে আটকদের। আরেকটি আলাদা টিন শেড ঘর ও আশপাশ এলাকা থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। খামারের মাঝে কয়েকটি পুকুরও আছে।
সাধনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খন্দকার ছমি উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, খামারটিতে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার নিষেধ থাকলেও সাতকানিয়ার কাঞ্চনা হয়ে জঙ্গিদের যোগাযোগ ও পাহাড় ঘিরে তাদের প্রশিক্ষণ চলতো। দুর্গম এলাকা বলে এখানে জনসাধারণের চলাফেরা ছিল না।
স্থানীয় আবদুর রহমান এনটিভিকে জানান, খামারটি কয়েক বছর ধরে তৈরি হচ্ছে। এখানে ভেড়া, গরু, ছাগল আনা নেওয়া হত। কিছু শ্রমিককে কাজ করতে দেখতাম। তবে নিজস্ব খামার হিসেবে বাইরের কোনো লোক যেতে পারত না।