নওগাঁর ডিসি-খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

খাদ্য নীতিমালা ভঙ্গ করে নওগাঁ সদর উপজেলার দুটি চালকলকে ৬৭ টন চাল পুনরায় বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগে নওগাঁর জেলা প্রশাসক (ডিসি), জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার নওগাঁ সদর উপজেলার সুলতানপুর এলাকার নিশি চালকলের মালিক শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। আদালত বাদীর আবেদন গ্রহণ করে ২০ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
চালকল দুটি হলো কনিকা-২ ও মাহবুব চালকল। এ দুটি প্রতিষ্ঠানকে চাল পুনরায় বরাদ্দের অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামিরা হলেন নওগাঁর ডিসি এবং জেলা সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি ড. মো. আমিনুর রহমান, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আনোয়ার হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সদর উপজেলা সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি হাসিনা আকতার, সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলী, সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অরুণ কুমার প্রামাণিক, নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি তৌফিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি আবদুল মোতালেব তালুকদার, কনিকা-২ চালকলের স্বত্বাধিকারী মেহেদী হাসান ও মাহবুব চালকলের স্বত্বাধিকারী মাহবুবুর রহমান।
আদালতে বাদীর আবেদন সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সদর উপজেলার ৩৫৬ জন বৈধ লাইসেন্সধারী মিল মালিক সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহের জন্য তালিকাভুক্ত হন। এর একটি ৩৪৯ নম্বর নজিবর চালকল। এ কলটির মালিকানা নিয়ে তিন ভাই—শফিকুল ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন ও জিল্লুর রহমানের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এ কারণে চালকলটি তাঁদের জন্য বরাদ্দকৃত ৬৭ টন খাদ্যগুদামে সরবরাহ করতে নির্ধারিত সময় ৩১ মের মধ্যে চুক্তি করতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ৬৭ টন চাল বরাদ্দ স্থগিত রাখেন।
আবেদনে বাদী উল্লেখ করেন, খাদ্য নীতিমালা অনুযায়ী, জেলা খাদ্য সংগ্রহ কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ৬৭ টন চাল ৩৫৫ জন মিল মালিকের মধ্যে পুনরায় বরাদ্দ করতে পারেন। কিন্তু জেলা সংগ্রহ কমিটির সিদ্ধান্ত না নিয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আনোয়ার হোসেন গত ৩০ আগস্ট কনিকা-২ ও মাহবুব চালকলের নামে ৬৭ টন চাল পুনরায় বরাদ্দ দেন, যা সম্পূর্ণ বেআইনি ও খাদ্য নীতিমালার পরিপন্থী।
মামলার বাদী শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ওই দুটি মিলের কোনো অস্তিত্ব নেই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আদালত থেকে চিঠি পেয়েছি। সঠিক সময়ে আদালতে জবাব দেওয়া হবে।’
পুনরায় বরাদ্দকৃত মিলের অস্তিত্ব না থাকা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সব সময় সঠিকভাবে যাচাই করে মিলের বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু অনিয়ম থেকেই যায়। সঠিকভাবে যদি খাদ্য বিভাগ নওগাঁর চালকলগুলো তদারকি করে, তাহলে অনেক মিল মালিক চাল বরাদ্দের তালিকা থেকে বাদ পড়বে। এ জন্য চালকল মালিক গ্রুপ যেভাবে আমাদের তালিকা দেয়, আমরা ওই তালিকা অনুসারে চালের বরাদ্দ বণ্টন করি। কোনো মিল মালিকের পক্ষে চালকল মালিক গ্রুপ সুপারিশে অনিয়ম করে থাকলে দায়ভার গ্রুপের নেতাদেরই নিতে হবে।’
এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আনোয়ার হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, খাদ্য নীতিমালা মেনে দুটি চালকলকে পুনরায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটি এবং চালকল মালিক গ্রুপের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম করা হয়নি।