দ্রুত অন্তর্বর্তী নির্বাচন দেওয়ার কথা বললেও দেয়নি : ড. কামাল

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বর্তমান সরকার দ্রুত সবার সঙ্গে আলোচনা করে নতুন নির্বাচন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা না করে জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে জেএসডি খুলনা জেলা ও মহানগর শাখার উদ্যাগে আয়োজিত নবগঠিত যুক্তফ্রন্টের প্রথম জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল এসব কথা বলেন। সুশাসন প্রতিষ্ঠা, তফসিলের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে এই জনসভার আয়োজন করা হয়।
ড. কামাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী কিংবা সাংসদরা নন, দেশের মালিক জনগণ। ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটের কোনো তদন্ত করেনি সরকার। এ জন্য আপনারা আসামি হতে পারেন। চার হাজার কোটি টাকাকে অর্থমন্ত্রী সামান্য বলায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই অর্থের মালিক আপনি নন, জনগণ। দেশের সব স্তরে দুর্নীতি ও লুট হয়েছে। সরকারি দলের নেতারা এর সাথে জড়িত। তাদের বিচার হয়নি।
জনসভায় জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সরকার জবাবদিহিতা করতে বাধ্য থাকবে। আগামী নির্বাচনে ভোট দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করুন। তিনি বলেন, সরকার প্রধানের পদত্যাগ, মন্ত্রিসভা বাতিল, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দিন। নির্বাচনকালীন সরকারের কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন আর হতে দেওয়া হবে না।
ইভিএমকে জাদুর মেশিন হিসেবে আখ্যায়িত করেন আবদুর রব। বলেন, ইভিএমের চিন্তা বাতিল করতে হবে।
জনসভায় ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, যেকোনো মূল্যে সরকারের ভোট চুরি ঠেকাতে হবে। জনগণ এবার ভোট দিতে চায়। মানুষ তার অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেমেছে। গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মানুষ রাজপথে নামবে।
ইভিএম প্রসঙ্গে মান্না বলেন, এটি ভোট কারচুপির একটি কৌশলমাত্র। প্রায় চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে দেওয়া যাবে না।
মান্না বলেন, কিশোরদের কোটা ও নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের ন্যায় ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। লাখো জনতার গণআন্দোলনের মধ্যে সরকার দাবি মানতে বাধ্য হবে। দেশের সবচেয়ে বড় সংকট চলছে। চার মাসের মধ্যে ভোট। এই ভোট দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে মানুষের মনের মধ্যে প্রশ্ন। তিনি বলেন, জুলুম বন্ধ করতে হবে। মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম চালাতে হবে। নিজের ভোট নিজে দিতে হবে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, বৃহত্তর ঐক্যের মধ্য দিয়ে এই জুলুমবাজ, দখলদার, ভোটচুরি ঠেকাতে হবে। লড়াই করতে চাই, লড়াই করেই বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে।
জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফর উল্লাহ চৌধুরী ও জেএসডির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন।
বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই জনসভায় আরো বক্তব্য দেন গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আতাউর করিম ফারুক, বিকল্পধারা বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, সোনার বাংলা পার্টির সভাপতি শেখ আব্দুর নূর, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী শহীদুল্লাহ কায়সার, জেএসডির সহসভাপতি দবির উদ্দিন জোয়ার্দ্দার, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদ হোসেন, মাগুরা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল, জেএসডির সহসভাপতি আব্দুস সালাম, জেলা সাধারণ সম্পাদক কাওসার আলী সানা, স্থানীয় জেএসডি নেতা আব্দুল লতিফ, জিল্লুর রহমান, অধ্যক্ষ শেখ আব্দুর খালেক প্রমুখ। যুক্তফ্রন্টের প্রথম এই জনসভায় সভাপতিত্ব করেন অ্যাডভোকেট আ ফ ম মহাসীন।