ব্যারিস্টার মইনুলকে গ্রেপ্তার সম্পূর্ণ বেআইনি : রিজভী
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2018/10/23/photo-1540287735.jpg)
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘মানহানি মামলায় তো প্রথমেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নজির নেই। প্রথমে সমন জারি করে আসামিপক্ষের বক্তব্য নেওয়া হয়। আসামিপক্ষ উপস্থিত না হলে পরবর্তী সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের গ্রেপ্তার সম্পূর্ণ বেআইনি।’
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনি এসব কথা জানান।
এ সময় রিজভী অভিযোগ করেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর তাদেরই নির্দেশে ব্যারিস্টার মইনুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রিজভী বলেছেন, ‘গতকাল প্রধানমন্ত্রী যখন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, মইনুল হোসেন একটি মামলায় জামিন পেয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আরো মামলা করেন, বাকিটা আমরা দেখছি। এ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলো। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো।’
এই বিএনপি নেতা আরো বলেন, ‘গতকাল মানহানির মামলায় দেশের প্রতিথযশা আইনজীবী ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে সরকার। মানহানি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা নজিরবিহীন ঘটনা। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে ব্যহত করতেই এ গ্রেপ্তার । তা ছাড়া ব্যারিস্টার মইনুল জামিনে ছিলেন, তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একজন ব্যক্তিও। শুধু অপশাসনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলাটাকেই অপরাধ হিসেবে গণ্য করছে সরকার। রাতে কোর্ট বসিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে যে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা সবার কাছে পরিষ্কার।’
নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এমন মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে চূড়ান্ত ক্র্যাক ডাউন শুরু করেছে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। এ যেন বাতি নিভে যাওয়ার আগে হঠাৎ জ্বলে ওঠা। গুপ্তহত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন, বিরোধী মত দলন-নিপীড়নের সঙ্গে দেশজুড়ে চলা গণগ্রেপ্তারের গতি এখন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।’
রিজভী আহমেদ বলেন, ‘সারা দেশে গায়েবি মামলার পর এখন চলছে গণগ্রেপ্তার। চট্টগ্রামের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করকে আটক করেছে পুলিশ। গত রাতে সিলেট ও চট্টগ্রামে বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে পুলিশ। বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের খবর আমরা পেয়েছি। এ ছাড়া গতকাল কক্সবাজার জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি এ টি এম নুরুল বশর চৌধুরী, কুতুবদিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি জামাল আহমেদসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা করেছে পুলিশ। এর মধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া গতকাল কক্সবাজারের ৪১৩ জনকে আসামি করে আরো চারটি গায়েবি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।’
এসব মামলা ও গ্রেপ্তার অভিযান থেকে বিএনপির নেত্রীরাও রেহাই পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ এই বিএনপি নেতার। বিজ্ঞপ্তিতে রিজভী আহমেদ সাতক্ষীরা ও বগুড়ায় গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের নাম তুলে ধরেন।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন অবশ্যই হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছিলেন, সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার ক্ষমতা তাঁর সরকারের আছে।
আজ রিজভী আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে সময় মতো নির্বাচন হবে। বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ বহাল থাকবে। যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলার ক্ষমতা আওয়ামী লীগ ও সরকারের আছে। জনগণের দাবি ও আন্দোলনকেই তিনি ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সরকার প্রধানের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার নীতির প্রতি যাদের তিনি অবাধ্য মনে করছেন তাদের ঠিকানা হচ্ছে কারাগারে।’
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা থেকে চারজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের প্রসঙ্গ তুলে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘দেশজুড়ে ফের গুপ্ত হত্যা শুরু করেছে সরকার। নারায়ণগঞ্জে চারজনকে হত্যার পর গুলিবিদ্ধ লাশ ফেলে রাখা হয় সড়কের পাশে। আজকে গণমাধ্যমের শিরোনাম হলো, রাতে ফাঁড়িতে, সকালে সড়কে লাশ । চারজনকেই ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। ফাঁড়িতে গিয়ে তাদের স্বজনরা তাদের খাবারও দিয়ে এসেছিল। সকালে গুলিবিদ্ধ, থেঁতলানো লাশ মিলল সড়কের পাশে। এটা কতটা মর্মান্তিক ও বিভৎস ঘটনা?’
রিজভী বলেন, ‘এ রকম নিষ্ঠুর অমানবিক ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষাও আমাদের জানা নেই। দেশের জনগণ যেন সারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এক অন্ধকারাচ্ছন্ন গ্রামে ভয়ার্ত দিন কাটাচ্ছে। বর্তমান দুঃশাসনের অবসান সময়ের ব্যাপার মাত্র।’