ময়মনসিংহে মইনুলের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2018/10/24/photo-1540376862.jpg)
সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে চরিত্রহীন বলার ঘটনায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহে আরেকটি মানহানির মামলা হয়েছে। এবারের মামলাটি করেছেন ময়মনসিংহ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদা তাহমিনা প্রীতি।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় ১ নম্বর আমলি রোজিনা খানের আদালতে এ মামলা হয়।
এদিকে, মামলাটি আমলে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম উপেন্দ্র চন্দ্র দাসকে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত। পরে এই খবর নিশ্চিত করেন বাদীর আইনজীবী পীযূষ কান্তি সরকার।
মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, টেলিভিশন টক শোতে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে প্রশ্ন করেন যে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সভা-সমাবেশে তিনি জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করছেন কি না। জবাবে তিনি মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলে আখ্যায়িত করেন।
যার ফলে মাসুদা ভাট্টিসহ নারী সমাজ ও সাংবাদিকদের মানহানিকর উক্তি করায় সমগ্র নারী সমাজকে অপমানিত করা হয়েছে। এ ছাড়া বাদী একজন নারী হওয়ায় এবং রাজনীতিবিদ হওয়ায় সামাজিক রাজনৈতিক এবং মানসিকভাবে আহত ও অপমানিত হয়েছেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে একই আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও ভালুকা উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান মনিরা সুলতান মনি।
গত ১৬ অক্টোবর একাত্তর টেলিভিশনের টক শো ‘একাত্তর জার্নাল’-এ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি প্রশ্ন করেন, ‘আপনার কাছে আমার একটি প্রশ্ন আছে। সেটি হচ্ছে যে, বলা হচ্ছে যে, আপনি এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় বা যুক্তফ্রন্ট বলছে, ঐক্যফ্রন্ট, এই ঐক্যফ্রন্টে আপনি যে হিসেবে উপস্থিত থাকেন, আপনি বলেছেন আপনি একজন নাগরিক হিসেবে উপস্থিত থাকেন। কিন্তু অনেকেই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলা হচ্ছে যে, আপনি জামায়াতের প্রতিভূ হয়ে ওখানে উপস্থিত থাকেন। এটি একটি প্রশ্ন। আপনি কি আসলেই জামায়াতের প্রতিনিধি হয়ে ওখানে উপস্থিত থাকেন কি না। এক নম্বর প্রশ্ন। আর দুই নম্বর প্রশ্ন হচ্ছে…।’
এই বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে রেগে গিয়ে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, ‘আপনার দুঃসাহসের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনি চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই। আমার সঙ্গে জামায়াতের কানেকশনের কোনো প্রশ্নই নাই। আপনি এই প্রশ্ন করেছেন, আমার জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। অন্য প্রশ্ন করেন। শিক্ষিতা ভদ্রমহিলা হিসেবে অন্য প্রশ্ন করেন।’
এরপর সঞ্চালক মিথিলা ফারজানা বলেন, ‘ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, সকলেই আমার সম্মানিত অতিথি। তাঁদেরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ কেউই করতে পারেন না। উনি প্রশ্ন করেছেন যেটি।’
এ সময় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, ‘আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে। আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে যে আমি জামায়াতের লোক। আপনি সেটা বন্ধ করেন না কেন?’
মাসুদা ভাট্টিকে প্রকাশ্যে সরাসরি অনুষ্ঠানে চরিত্রহীন বলায় দেশজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে এ মন্তব্যের জন্য ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ব্যক্তিগতভাবে মাসুদা ভাট্টির কাছে ফোন করেন এবং লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু মাসুদা ভাট্টি তাঁকে ক্ষমা করেননি। ওই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে গত রোববার দুপুরে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূরের আদালতে মানহানির মামলা করেন মাসুদা ভাট্টি। আদালত ব্যারিস্টার মইনুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এ ছাড়া ব্যারিস্টার মইনুলের বিরুদ্ধে রংপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ভোলা ও কুড়িগ্রামে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একাধিক মামলায় পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
এরই মধ্যে গত সোমবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর উত্তরা থেকে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে, গতকালও ব্যারিস্টার মইনুলের বিরুদ্ধে কক্সবাজার ও মাগুরায় আরো দুটি মানহানির মামলা করা হয়েছে। দুটি মামলাতেই মইনুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।