লাঠিখেলায় মাতল গাংনী

বাজছে ঢোল। দর্শকরা বিরামহীন তালি বাজিয়ে উৎসাহ দিচ্ছেন। সবকিছু ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে লাঠির আওয়াজ। প্রতিপক্ষের লাঠির হাত থেকে রক্ষা ও প্রতিপক্ষকে কাবু করার মধ্যেই নির্মল আনন্দের সন্ধান এসব দর্শকের। আর ঐতিহ্যবাহী এ লাঠিখেলার আনন্দ নিয়েছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বাসিন্দারা।
গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া তিনদিনব্যাপী লাঠিখেলার আয়োজন শেষ হয় গতকাল শনিবার। গাংনীর স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল ইসলামের উদ্যোগে ওই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় সহযোগিতা করে গাংনীর খাদিজা-আশরাফ ফাউন্ডেশন।
বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লাঠিয়ালরা তাঁদের শারীরিক কসরত দেখিয়ে মন কেড়েছেন দর্শকদের। দর্শকরা বিশেষ করে প্রবীণ দর্শকরা যেন ফিরে গিয়েছিলেন শৈশবে।
প্রতিযোগিতায় মেহেরপুর জেলা ছাড়াও কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার ১২টি লাঠিয়াল দল অংশ নেয়। লাঠির কলাকৌশল দিয়ে প্রতিপক্ষের আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং পরিবারকে কীভাবে রক্ষা করতে হয়, তা প্রদর্শন করেন নবীন ও প্রবীণ লাঠিয়ালরা।
প্রতিযোগিতায় মেহেরপুরের সহড়াতলা দল চ্যাম্পিয়ন, চরগোয়াল গ্রাম রানার্সআপ ও কুষ্টিয়ার বিল বোয়ালিয়া লাঠিয়াল দল দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতেই এই আয়োজন বলে জানান আয়োজক রেজাউল ইসলাম। সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন দৌলতপুরের তেকালা লাঠিয়াল দলের দলনেতা শফি উদ্দীন ও তাঁর মেয়েশিশু। তাঁদেরও পুরস্কৃত করা হয়।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক। তিনি বিজয়ী ও রানার্সআপ দলের খেলোয়াড়দের হাতে একটি করে খাসি ছাগল তুলে দেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে পুরস্কার বিতরণ করেন যুবলীগ নেতা ও খাদিজা-আশরাফ ফাউন্ডেশনের পরিচালক আশরাফুল ইসলাম আশরাফ।
খেলায় অনুষ্ঠানের ধারা বিবরণী করে দর্শকদের হৃদয় আকৃষ্ট করেন গাংনী মহিলা কলেজের প্রভাষক মহিবুর রহমান মিন্টু। সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক রেজাউল ইসলাম। আরো উপস্থিত ছিলেন কৃষক লীগ নেতা ফজলুল হক, বিশিষ্ট সমাজসেবক বশির আহম্মেদ, যুবলীগ নেতা আনারুল ইসলাম বাবু, মিজানুর রহমান হাসু ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রীরা।
বেতবাড়িয়া লাঠিয়াল দলের দলনেতা ইছাহক আলী জানান, তিনি ১৪ বছর বয়স থেকে লাঠি খেলে আসছেন। জীবনে অনেক স্থানে খেলা করে মানুষকে আনন্দ দিয়েছেন। কিন্তু অন্যান্য খেলার মতো সরকারিভাবে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে কোনো প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা নেই। সরকার যদি লাঠিখেলায় পৃষ্ঠপোষকতা করে, তাহলে দেশ ছাপিয়ে বিদেশের মাটিতেও এই খেলায় দেশের সুনাম অর্জন হবে। গ্রাম-বাংলার সাধারণ মানুষ ও লাঠিয়ালদের রক্তের সঙ্গে এই খেলা মিশে থাকলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন একাধিক প্রবীণ লাঠিয়াল।