শতভাগ দিয়ে কাজ করব : শপথ গ্রহণের পর সুবর্ণা

বাবা হারানোর দিনে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করলেন অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আজ বুধবার সকালে জাতীয় সংসদের শপথকক্ষে সুর্বণাসহ ৪৯ জন নারীকে শপথ বাক্য পাঠ করান।
এরপর দীর্ঘদিনের অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে বিকেলে পেয়েছেন দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সুবর্ণা মুস্তাফাসহ ২১ বিশিষ্টজনের হাতে একুশে পদক, সনদ ও দুই লাখ টাকার চেক তুলে দেন।
এর আগে আজ শপথ গ্রহণের পর সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে কথা বলেন সাংবাদিকরা। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপা আপনাকে অভিনন্দন। এই যে ৪৯ জনের মধ্যে আপনাকে আমরা বেশি চিনি। আপনারা আজ শপথ নিলেন। আপনারা অনুভূতি কী এবং আপনার সামনের পথচলা কেমন হবে?
সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, ‘আমি নিশ্চিত মাস খানেকের মধ্যে সবাইকে চিনে যাবে। কারণ এঁরা অত্যন্ত কর্মঠ এবং গ্রাসরুট লেভেল থেকে উঠে আসা ডেডিকেটেড ওয়ার্কার্স। আমি ৫০ বছর ধরে একটা কাজ করছি যেটার সঙ্গে আপনারা সবাই সম্পৃক্ত। খুব স্বাভাবিক যে আপনারা আমাকে বেশি চিনবেন।
আর অনুভূতি খুবই ভালো। খুবই এক্সাইটেড। আমি সংসদ ভবনে এই জীবনে প্রথম ঢুকলাম এবং এত বড়, একটা বিশাল লাইব্রেরি আছে।’
সুবর্ণা মুস্তাফা আরো বলেন, ‘এখনো কাজ কী, সেটা জানি না। নির্দিষ্ট করা হবে। কাজটা জানি না। আগের বারের মতো বলছি, যে কাজটি দেওয়া হবে সেটা আমি আমার শতভাগ দিয়ে করব, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।’
আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্যদের ক্ষমতা তো খুব সীমিত। এই সীমিত ক্ষমতার মধ্যে আপনি কতটুকু করতে পারবেন?
জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। তবে আমার একটা জিনিস আমি বিশ্বাস করি, ক্ষমতার জায়গাটাকে বাড়ানো যায়, সঠিকভাবে কাজটি করতে পারলে। কারণ অনেক ক্ষমতাধর মানুষ এই সংসদে, এই টার্মে ক্ষমতায় নেই প্রায়। বোঝাতে পারলাম কথাটা।’
আরেক সাংবাদিক জানতে চান, সামনের দিনগুলোতে কোন দিকগুলো সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ মনে করছেন সামাজিক প্রেক্ষাপটে?
জবাবে সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, ‘সামাজিক প্রেক্ষাপটে, এভরি থিংক ইজ এ চ্যালেঞ্জ। সবই চ্যালেঞ্জ। যেমন সংরক্ষিত কথাটি অনেকের মনে হয় খুব ইজি এখানে চলে আসা। আসলে তা নয় ব্যাপারটা। আর সত্যি কথা হচ্ছে, মেয়েরা বিভিন্ন ফিল্ডে ডেফিনিটলি রাজনীতিতেও আগাচ্ছে। সংরক্ষিত আসনটি তাদের (মেয়েদের) এক ধরনের সাপোর্ট দেওয়া। তাদের বলা যে তুমিও পারবে, তাদের নিয়ে আসার পরে এবং এটাও দেখা গেছে, সংরক্ষিত আসন থেকে বেরিয়ে সে নিজেই নির্বাচন করেছে। সুতরাং দেখতে চাইলে আমি সবকিছুই আর্ধেক গ্লাস ভরা দেখতে পারি। আবার দেখতে চাইলে আমি সবকিছুই আর্ধেক গ্লাস খালি দেখতে পারি। এটা দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করবে।’
এদিকে, আজ সকালে সুবর্ণা মুস্তাফা তাঁর ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ষোল বছর !!!!!
অথচ মনে হয় এই তো সেদিন।
বোবার সাথে দেখা করে ফিরছি।
আজ অদ্ভুত এক দিন ....
বোবার চলে যাওয়ার দিন....
আমার শপথ গ্রহণ করার দিন ....
আমার একুশে পদক গ্রহণ করার দিন ....
জীবনের সুখ দুঃখ মিলে মিশে একাকার হয়ে যাওয়ার দিন ....
বোবা, তোমাকে আর আম্মাকে আমি আর সুমিত বাবু অনেক ভালোবাসি।’
এ বিষয়ে সুবর্ণা মুস্তাফা আজ শপথ নেওয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘এক ধরনের ডিপ্রেসিং আসছিল। আমার বাবা মারা গেছে এই মাসে। এই ফেব্রুয়ারিতে বাবার মৃত্যুদিনে আমি শপথ নিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর (স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী হবে) কাছ থেকে।’
সুবর্ণা মুস্তাফার বাবা দেশের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী ও আবৃত্তিকার গোলাম মুস্তাফা ২০০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ইন্তেকাল করেন। তাঁর ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ ও একুশে পদক নিলেন মেয়ে সুবর্ণা মুস্তাফা।