খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে রাজনীতি করছে বিএনপি

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত দিকটার চেয়ে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট এযাবৎ রাজনীতি বেশি করেছে। বাস্তবে আমরা দেখেছি, বিএনপি তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে যতটা না উদ্বিগ্ন, তার চেয়ে বেশি তাঁর অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি করেছে।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ফেনী সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
এর কিছু আগেই আজ সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে সরকার ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
গত সাড়ে তিন মাসে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি, এর পেছনে গভীর কোনো ষড়যন্ত্র আছে। মূলত তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিয়ে অকালে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আমরা সাফ জানিয়ে দিতে চাই, দেশনেত্রীর যদি কোনো প্রকার শারীরিক ক্ষতি হয়, এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।’
এর কিছু পরেই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর কাছ থেকে এ বক্তব্য এলো। ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বাস্তবটা কী? বিএনপি তাঁর শারীরিক অবস্থাকে যেভাবে চিত্রিত করছে, বাস্তবে কি তিনি শারীরিকভাবে সে অবস্থায় পড়েছেন? রাজনীতিটাই ছিল বিএনপির মূল উদ্দেশ্য।’
‘ডাকসু আর উপজেলা নিয়ে স্ববিরোধী বিএনপি’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী, তবে নির্বাচনে হেরে গেলেও হতাশার কোনো কারণ নেই।’
ডাকসু নির্বাচনে নিরপেক্ষতা ভঙ্গ হওয়ার কোনো কারণ নেই জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসুর ইনস্টিটিউশন আছে, গঠনতন্ত্র আছে, নির্বাচন আচরণবিধি আছে। গঠনতন্ত্র ও আচরণবিধি অনুযায়ী ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে সরকারের বা কারো চাপের বা হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই এবং কোনো কারণও নেই।’
ডাকসু নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়ার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, কিন্তু উপজেলাতে অংশ নিচ্ছে না। এটা তাদের স্ববিরোধী রাজনীতি। এসব কারণেই জনগণের মাঝে তাদের সমর্থনের যে ভিত, এই ভিত ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়েছে।’
‘শুধু তৃণমূলের তালিকায় মনোনয়ন নয়’
উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তৃণমূল থেকে যে তালিকা পাঠানো হয়েছে, সে হিসেবে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে, তা নয়। প্রার্থীদের প্রত্যেকের তিনটি করে প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা আছে। সে হিসেবে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। যদি কোথাও প্রার্থী মনোনয়নে ভুল হয়ে থাকে, তা প্রত্যাহারের আগে সংশোধন করার সুযোগ রয়েছে।’
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, ‘শুধু যে তৃণমূলে নাম গেলেই, সে নামের ওপরে আমরা ভিত্তি গড়ি, এটা ঠিক না। তৃণমূলের নামের সঙ্গে যাঁদের নাম পাঠানো হয়, এমনও দেখা যায়, অনেকের নামও নেই। তৃণমূলে হয়তো নানা কারণে তাঁদের নাম যায়নি, সেখানে আমরা সার্ভে রিপোর্ট দেখে যদি কেউ মনোনয়ন চায় এবং তাঁর গ্রহণযোগ্যতা যদি থাকে, সে ক্ষেত্রে আমরা সার্ভে রিপোর্টের ভিত্তিতে স্পেশাল কন্সিডারেশন করে থাকি। এবং প্রশাসনিকভাবে থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে পাওয়া তথ্য থেকে আমরা ইনফরমেশন সংগ্রহ করি। এবং সেই আলোকে মনোনয়ন দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করি।’
বিএনপির তৃণমূলের অনেক নেতা বিভিন্ন উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপির তৃণমূলের নেতারা কেন্দ্রের কথা মানছেন না।
‘কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বের করার চেষ্টা করছে বিএনপি’
পিলখানার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপির জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘পিলখানার সেই রক্তাক্ত ঘটনা সংঘটিত হওয়ার আগেই সেদিন ভোরবেলা খালেদা জিয়া পালিয়েছিলেন। ২৪ ঘণ্টা ধরে তাঁর অবস্থান কেউ জানত না। মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেবের কাছে আমি জানতে চাই, খালেদা জিয়াকে ২৪ ঘণ্টা ধরে তাঁরা কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলেন। এবং কেন তাঁকে ২৪ ঘণ্টা লুকিয়ে থাকতে হলো? এর সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের যে রহস্যময় দিকটা তিনি উন্মোচন করতে চাচ্ছেন, এর কোনো যোগসূত্র আছে কি না, সেটা আমাদের ভেবে দেখতে হবে।’
‘২৪ ঘণ্টা থেকে অজ্ঞাত স্থানে তিনি কেন নিখোঁজ ছিলেন, এর সঙ্গেই হয়তো নেপথ্যের কারণ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। সেটা তাহলে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। এখন কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বিষধর সাপ বের করার চেষ্টা করছেন তাঁরা,’ যোগ করেন ওবায়দুল কাদের।
বিএনপি নীতি-নৈতিকতার দিক থেকে অত্যন্ত দুর্বল উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী আরো বলেন, ‘নেগেটিভ রাজনীতির কারণে বিএনপি নির্বাচনেও ব্যর্থ, আন্দোলনেও ব্যর্থ। জনগণের সমর্থন তাঁরা পাচ্ছেন না।’
এ সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আরো উপস্থিত ছিলেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, ফেনী পৌরসভার প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী প্রমুখ।