দোকানের সঙ্গে মনও পুড়ে গেছে রহিমের

চোখের সামনে দোকান নয়, নিজের স্বপ্নকেই পুড়তে দেখেছেন আবদুর রহিম। রাজধানীর গুলশান ১-এর ডিএনসিসি মার্কেটে আজ শনিবার ভোরের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তাঁর দুটি দোকানই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মার্কেটের উত্তর-পূর্ব কর্নারের মেসার্স বিল্লাল স্টোর ও শরীয়তপুর স্টোর এই দুটি ক্রোকারিজের দোকানের মালিক তিনি।
দুপুর ১২টার দিকে দোকানের ভেতর থেকে পুড়ে ছাঁই হওয়া জিনিসপত্র বের করছিলেন আর বিলাপ করছিলেন তিনি। চোখের পানি মুছতে মুছতে এনটিভি অনলাইনকে আবদুর রহিম বলেন, দোকানের সঙ্গে সঙ্গে পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে মনটাও। চোখের সামনে শুধুই অন্ধকার দেখছেন। সন্তানদের নিয়ে কীভাবে পথ চলবেন মনে শুধু সেই শঙ্কা।
ভোরে মার্কেটে আগুন লাগার পর পরই ফোনে খবর পান আবদুর রহিম। নিজ দোকানের সামনে দুপুর ১২টার দিকে এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘ভাই বিশ্বাস করবেন না, আগুন লাগার খবর পাওয়ার পর হাত পা অবশ হয়ে গেছে। বাসা থেকে মার্কেটের দিকে আসব, এ শক্তিটুকুও শরীরে পাচ্ছিলাম না। দৌড় দিয়ে নিচে নেমে পাগলের মতো একটা রিকশা খুঁজতে থাকি। মার্কেটের সামনে এসে দেখি দাও দাও করে আগুন জ্বলছে। আগুনের লেলিহান শিখা দেখেই বুঝছিলাম ২০১৭ সালের ঘটনাই ঘটতে যাচ্ছে। ওই সময় কিছুই উদ্ধার করতে পারিনি। এবারও হয়তো কিছুই পাব না।’
কথা বলছিলেন আর কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন আবদুর রহিম। ২০১৭ সালের অগ্নিকাণ্ডেও দুটি দোকানই পুড়ে গিয়েছিল তাঁর। আক্ষেপ করে বলেন, কোনো সহায়তা পাননি কারো কাছ থেকে। গ্রামের জায়গাজমি বিক্রি করে দোকান দুটি আবার দাঁড় করিয়েছেন।
রাজধানীর গুলশান ১-এর ডিএনসিসি মার্কেটে আগুনে পুড়ে গেছে আবদুর রহিমের দুটি দোকান। আজ শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে মালামাল সরান তিনি ও তাঁর ছোট ভাই। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম
বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই গুলশান ১-এর ডিএনসিসি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মার্কেটের কাঁচাবাজার অংশে ওই আগুনের সূত্রপাত হয়। প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেন, ভোরে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট। আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় সেনা ও নৌ বাহিনীর সদস্যরাও।
ডিএনসিসি কাঁচাবাজার অংশে মূলত বিভিন্ন মুদি ও খাদ্য সামগ্রীর প্রায় ৩০০ দোকান ছিল বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মার্কেটটি ঘিরে রেখেছে। শুধু দোকানের মালিকদের ভেতরে ঢুকতে দেয় তারা। ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান থেকে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। অধিকাংশ মালামালই পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে।
আবদুর রহিম বলেন, ক্যাশবাক্সে কিছু টাকাপয়সা ও ব্যাংকের চেক বইসহ প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র ছিল। কিছুই পাইনি। সব কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
রহিম বলেন, ‘আমার দুটি দোকানের মধ্যে একটি পরিচালনা করত ছোট ভাই। আর বড় দোকানটি আমিই চালাইতাম। দুই ভাই এক সঙ্গে এক বাসায় যৌথভাবে বসবাস করি। এখন কীভাবে সংসার চালাব, কীভাবে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচ চালাব, কিছুই নেই ভাই। নতুন করে আবার দাঁড়ানোর কোনো পথও আপাতত নেই। সামনে শুধুই অন্ধকার দেখছি ভাই।’