‘বিশ্বাস করেন ভাই, আমি চোর না’
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/10/17/photo-1445081425.jpg)
সাত থেকে আটজন মানুষ মিলে পেটাচ্ছেন ১৫-১৬ বছরের এক কিশোরকে। সে চিৎকার করে বলছে, ‘বিশ্বাস করেন ভাই, আমি চোর না।’ তবু মারধর কমছে না। শুধু পিটিয়েই ক্ষান্ত দেওয়া হয়নি, ইলেকট্রিক প্লাস দিয়ে ডান হাতের চারটি আঙুল থেকে নখও উপড়ে ফেলা হয়েছে।
আর এসব অত্যাচারই করা হয়েছে চোর সন্দেহে। অর্থাৎ চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা না পড়ে কিংবা চোর প্রমাণিত হওয়ার আগেই শাস্তি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আর এই শাস্তি বাস্তবায়নের সময় উপস্থিত ছিলেন এলাকার এক নারী কাউন্সিলরও।
গত বুধবার রাতে নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আজ শনিবার সকালে নির্যাতিত কিশোর নাছিরের বাবা তোতা মোল্লা বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ছয়জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছেন।
নির্যাতিত কিশোর নাছির গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বড়গাঁও এলাকার বাসিন্দা। তবে সংসারের খরচ জোগাতে পেশা হিসেবে রিকশা চালানোকে বেছে নিতে হয়েছে তাকে। সে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল এলাকায় রিকশা চালাত।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নাছির বলে, গত বুধবার রাতে যাত্রী নিয়ে দড়িহাওলা পাড়ায় যায় সে। সেখানে যাত্রী নামিয়ে ফেরার পথে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে স্থানীয় আমিনবাড়ির পাশের জঙ্গলে যায় নাছির। সেখান থেকে ফেরার পথে ওই বাড়ির লোকজন চোর সন্দেহে তাকে আটক করে। পরে ঘোড়াশাল পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর শাহানাজ পারভিনকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে আসেন তিনি।
চোর সন্দেহে নাছিরের ওপর রাতভর চলে নির্যাতন। সাত-আটজন ব্যক্তি মিলে লাঠি দিয়ে পেটায় তাকে। একপর্যায়ে চারটি আঙুলের নখও তুলে ফেলা হয়। পরে নাছিরের অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়লে তাকে প্রাথমিক টিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ঘটনাটি সম্পর্কে ওই বাড়ির মালিক আমিন জানান, রাতে বাড়ির ভেতর থেকে বের হচ্ছিল নাছির। পরে তাকে চোর সন্দেহে আটক করে কাউন্সিলরকে খবর দেওয়া হয়। তবে মারধরের বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বালুচরপাড়া এলাকার মনির হোসেন বলেন, ‘নাছির সম্পূর্ণ নির্দোষ। তারা তাকে অন্যায়ভাবে পাশবিক নির্যাতন করেছে। চুরির কোনো সঠিক তথ্যই আমিনবাড়ির সদস্যরা দিতে পারেনি। পরে আমি আমার জিম্মায় ঘটনাস্থল থেকে তাকে ছাড়িয়ে আনি।’
কীভাবে একজন কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে শুধুমাত্র সন্দেহের বশে কাউকে পেটানো হলো তা জানতে কাউন্সিলর শাহানাজ পারভীনের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হয়। তবে ফোনে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
তবে পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে এটা সত্য। তবে নখ উপড়ে তোলার ব্যাপারটি পুরোপুরি সঠিক নয়। এ ছাড়া ঘটনাটি দড়িহাওলা পাড়ায় নয়, ঘোড়াশাল ওয়াপদা কোয়ার্টার এলাকায় ঘটেছে। এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আমরা আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।’