সাত খুন মামলার নারাজি খারিজের রিভিউ মামলার রায় ৯ নভেম্বর

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার অভিযোগপত্রের নারাজির রিভিউ মামলার যুক্তি-তর্ক শেষ হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে যুক্তি-তর্ক শেষে বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আগামী ৯ নভেম্বর।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে হত্যার ঘটনায় ফতুল্লা থানায় একটি মামলা করেন নিহত নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। মামলার আসামি করা হয় সিদ্ধিরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা ও কাউন্সিলর নূর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া, হাসমত আলী হাসু, তাঁদের সহযোগী আমিনুল হক রাজু, আনোয়ার হোসেন আশিক ও ইকবাল হোসেনকে।
অপর দিকে একই ঘটনায় সিনিয়র আইনজবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক হত্যার অভিযোগে নিহত চন্দন সরকারের জামাতা ডা. বিজয় কুমার অজ্ঞাত নামের ব্যক্তিদের আসামি করে আরো একটি মামলা করেন।
১১ মাস তদন্ত শেষে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ছাড়া বাকি পাঁচ আসামির নাম বাদ দিয়ে তিন কর্মকর্তাসহ র্যাবের ২৫ সদস্য ও নূর হোসেনের অপর ৯ সহযোগীসহ মোট ৩৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর সেলিনা হোসেন অভিযোগপত্রটি ত্রুটিপূর্ণ দাবি করে আদালতে নারাজির আবেদন করলে গত ৮ জুলাই তা খারিজ হয়ে যায়। তারপর ২১ জুলাই জেলা দায়রা জজ আদালতে রিভিউ মামলা করেন।
মামলার বাদী ও নিহত নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, ‘নূর হোসেন দেশে আসার পরই মূল পরিকল্পনাকারী এবং অর্থ জোগানদাতা বের হয়ে আসবে। তাই আমি আদালতের কাছে আবেদন করেছিলাম নূর হোসেন আসার পর পুনরায় এই মামলার তদন্ত হোক। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বের করা হোক কে কে এর সঙ্গে জড়িত। আমি চাই যারা দোষী তারাই যাতে এ মামলার সঙ্গে জড়িত হয়। যারা নির্দোষ তারা মামলা থেকে বেঁচে যাক। এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে যাদের নাম দিয়েছিলাম কোন কারণে চার্জশিট থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া হলো। তাদের বাড়িতে একদিনও পুলিশ যায়নি। জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি। এ কারণে পূর্ণ তদন্ত দিয়ে আমি এই মামলার তদন্ত চাচ্ছি।’
নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জানিয়ে সেলিনা ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এত দিন পুলিশ পাহারা দিত। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে সেই পুলিশও প্রত্যাহার করা হয়েছে। ইয়াসিন এসে আমাদের ওপর অনেক অত্যাচার করেছে। আমাদের ছেলেদের অনেক মারধর করেছে। আমার আত্মীয়স্বজনদের বিরুদ্ধে মামলা দিছে। আমার দেবর, ভাসুর, মামাশ্বশুর, বাবা, ভাই আত্মীয়স্বজনের নামে মামলা দিছে। এখন নূর হোসেন আসবে। সে আসার পর কী পরিস্থিতি দাঁড়ায় সেই ভয়ে আছি।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা যে অভিযোগপত্র দায়ের করেছেন তাতে কিছু অসঙ্গতির কারণে আমরা এজাহারকারী পক্ষ নিম্ন আদালতে নারাজি দরখাস্ত করেছিলাম। সেটি নামঞ্জুর হওয়ায় আমরা দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা দায়ের করি। আজ এটির শুনানি ছিল। এজাহারকারীর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছি। অভিযোগপত্রে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার ভুল-ত্রুটি, অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরেছি। ছয়জন আসামি ছিল তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এই মামলার আরেকজন আসামিকে তার নাম ঠিকানা না থাকার কারণে আসামিভুক্ত করা হয়নি। নূর হোসেন ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু এখনো ফেরত আনা হয়নি। কারা কিসের বিনিময়ে র্যাবকে দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে নূর হোসেন দেশে আসার পর তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে এগুলো কিন্তু বেরিয়ে আসবে। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেছে। আশা করি আগামী ৯ নভেম্বর রিভিশন মামলার রায়ে ন্যায়বিচার পাব।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এপিপি ফজলুর রহমান বলেন, বাদী নূর হোসেনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে সন্দেহ করে মামলা করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। বিচারটি বিলম্বিত করার উদ্দেশ্যেই তাঁরা একবার নারাজি, একবার রিভিশন করছেন। গত ৮ জুলাই নিম্ন আদালত নারাজি নামঞ্জুরের যে আদেশ দিয়েছেন তা শুদ্ধ এবং সঠিক এবং তা ভবিষ্যতেও বহাল থাকবে।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তাঁর বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে আরেকজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।