জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে আরেকটু সচেতন হোন

জঙ্গিদের জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিচারপতিদের আরেকটু চিন্তা করা ও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘বিচার না পেলে সরকারের দোষ। কিন্তু যখন জামিন পেয়ে যায়, তখন কাকে দোষ দেবেন? সে দোষও আসে সরকারের ওপরে। আগামীতে আরো কঠোরভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
urgentPhoto
আজ বুধবার দশম জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেছেন।
প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক সময় আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম, শত শত কোটি টাকা খরচ করে একজন ক্রিমিনালকে যদি ধরা হলো, আর সে পুরো ছয় মাস বা এক বছরের যে প্রচেষ্টা ১৫ দিনের মধ্যে শেষ বা এক মাসের মধ্যে শেষ। অমনি তারা জামিন পেয়ে গেল। তখন আর আমাদের তো কিছু করার থাকে না। আমার মনে হয় এ জন্য জনমতের সৃষ্টি হওয়া উচিত। তা ছাড়া আমাদের তো সন্ত্রাস দমন আইন আছে। সেখানেও দেখা যাচ্ছে ধীরে ধীরে নানা অজুহাতে দেরি হচ্ছে। এটা যাতে না হয় সে ব্যাপারে বিচার বিভাগের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে যে তারাও যেন এ ব্যাপারে আরো একটু সচেতন হন।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এটা সত্যিই খুব দুর্ভাগ্যের। তাদের পক্ষে একজন আইনজীবী থাকবে এটা স্বাভাবিক। বিচারক বিচার করবেন। আমাদের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন। স্বাধীন বলেই কিন্তু তারা এভাবে জামিন দিতে পারছেন। আমিও সংসদ সদস্যের মতো আহ্বান জানাব জামিন যখন দিচ্ছেন, তখন অন্তত এরা যে দোষটা করেছে, এরা যে সমস্ত অপরাধ করেছে, অন্ততপক্ষে সে অপরাধের মাত্রাটা সম্পর্কে একটু যদি চিন্তা করে তারপর তাদের জামিনের ব্যবস্থা করে তাহলেই কিন্তু হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশকে ও দেশের মানুষের নিরাপত্তার কথাটা সকলকেই চিন্তা করতে হবে। এর বেশি বোধহয় আমি আর কিছু বলতে পারছি না। দোষ সব আমাদের ওপর আসে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমরা যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তখন এক ধরনের জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসী দেশে নানা ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। যারা ঘটনা ঘটাচ্ছে, আমরা যদি তাদের গোড়ায় যাই। এদের পরিচয়টা কিন্তু এক জায়গায়। ওই একি লোক যারা স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সেই জামায়াত-শিবির ও বিএনপির লোকেরাই এদের দোসর। তারাই বিভিন্ন নামে বিভিন্ন পরিকল্পনায় একটার পর একটা ঘটনা ঘটাচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমি আহ্বান জানিয়েছি। আজ মহান সংসদে মাননীয় স্পিকার আপনার মাধ্যমে আহ্বান জানাচ্ছি। এই জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যারা ঘটাচ্ছে বা সাইবার ক্রাইমে যারা লিপ্ত সারা দেশের মানুষকে বলব, যে যেখানে পারেন, এদের ধরিয়ে দিন, এদের চিহ্নিত করুন।’
পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এই সমস্ত দুষ্কৃতকারী, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী এবং সাইবার ক্রাইমে জড়িত তাঁদেরকেও ধরিয়ে দিতে হবে। তাহলেই এ দেশের মানুষের শান্তি ফিরে আসবে। দেশের মানুষের নিরাপত্তার জন্য, দেশের মানুষের শান্তির জন্য, জানমাল রক্ষার জন্য- যখন যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, সেই পদক্ষেপ আমরা নেব।’
লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালের লিখিত প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের জীবন ও ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার লক্ষ্যে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খণা রক্ষাকারী বাহিনী পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, জন সাধারণের সম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তাসহ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন পদেক্ষপ গ্রহণ করা হয়েছে।’
‘বিদেশি নাগরিক হত্যায় গ্রেপ্তার অভিযান চলছে’
সম্প্রতি বিদেশি নাগরিক হত্যাকারীদের বিচারের লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকা মহানগর এলাকায় ইতালির নাগরিককে হত্যা সংক্রান্তে গুলশান থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলার তদন্তভার গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সহায়তা করার জন্য গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য বিভাগের দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২ নভেম্বর ২০১৫ তারিখ পর্যন্ত সর্বমোট চারজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুজন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। এ ছাড়া রংপুর জেলায় জাপানি নাগরিককে হত্যা সংক্রান্তে রংপুর জেলার কাউনিয়া থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ওই মামলায় দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। পুলিশ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা সমন্বিতভাবে বিদেশিদের হত্যাকারী, পরিকল্পনাকারী এবং এর মদদদাতাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করছে। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী এবং বিদেশি হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা রুজুসহ গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে।’